তৃণমূলের জেলা সভাধিপতির বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ আদালতের

তৃণমূলের জেলা সভাধিপতির বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ আদালতের

763cee62ef579df7e9aff315fc159841

বর্ধমান: যুবককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ধরায় পূর্ব বর্ধমানের জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর করে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিল বর্ধমান আদালত। যুবকের মায়ের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার বর্ধমান সিজেএম আদালত খণ্ডঘোষ থানার ওসিকে এই নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের এই নির্দেশ ঘিরে শোরগোল পড়ে গেছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।

খণ্ডঘোষের দুবরাজহাট গ্রামের বছর ২৬ বয়সি যুবক পবিত্র কুমার ঘোষ গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বাড়িতে কীটনাশক খায়। পরিবারের লোকজন পরের দিন সকালে তাঁকে ঘরের মধ্যে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তারা পবিত্রকে দ্রুত উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ছেলের এই মৃত্যুর প্রকৃত বিচার চেয়ে মা কল্পনা ঘোষ শুক্রবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে মামলা করেন। দায়ের হওয়া সেই মামলাতে নাম জড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সভাধিপতি সহ ৪ জনের। যাদের বিরুদ্ধে যুবককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ধারায় মামলা রুজু করে খণ্ডঘোষ থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা।

মামলাকারীর আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যুবকের মৃত্যুর পর বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। সেই বিষয়টি খণ্ডঘোষ থানা এবং এসপিকেও তারা জানান। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে মৃত যুবকের মা আদালতে মামলা করেছেন। যদিও সভাধিপতি এদিন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।’ সভাধিপতির স্পষ্ট জবাব, ‘তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও পরিকল্পনা করে সাজানো।’ খণ্ডঘোষ থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, ‘আদালত নির্দেশ দিলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপার্থিব ইসলাম জানিয়েছেন, ‘মামলার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’

বর্ধমান আদালতে দায়ের করা মামলায় কল্পনা দেবী জানিয়েছেন, ‘তাঁর মেধাবী ছেলে পবিত্র আইটিআই পাশ করার পর একটি নামি বেসরকারী সংস্থায় চাকরির নিয়োগপত্র পায়। কিন্তু ছেলের সঙ্গে সভাধিপতির ভাব-ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। ছেলেকে এ রাজ্যে চাকরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন সভাধিপতি। সেই আশ্বাসে ছেলে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি ছেড়ে দেয়। পরে সভাধিপতি শম্পার সঙ্গে এক ঠিকাদার ও রায়নার শ্যামসুন্দরের এক তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। পবিত্র এই ঘনিষ্টতার প্রতিবাদ করায় কাপশিট গ্রামের এক নেতা বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায়। ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সেই তৃণমূল নেতা ও সভাধিপতি বাড়িতে এসে পবিত্রকে মোবাইলের সমস্ত তথ্য ও কিছু ছবি দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। বিনিময়ে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে তারা ছেলেকে বলে। পবিত্র তা দিতে রাজি না হওয়ায় পরিবারের লোকজনকে তারা গাঁজা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরপর ১৩ জানুয়ারি জেলা পরিষদ অফিসে পবিত্রকে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে সভাধিপতি, এক ঠিকাদার সহ কয়েকজন পবিত্রকে মারধর করে এবং বিভিন্ন কাগজপত্র দিয়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। পবিত্রর মোবাইল ফোনও ভেঙে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসে পবিত্র কান্নাকাটি করে। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর ঘরে ঢুকে পবিত্র কীটনাশক খেয়ে নেয়।’ কল্পনাদেবী বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর দিন ওই ঘর থেকে সুসাইড নোট উদ্ধার হয়। সেই সুইসাইড নোটে ছেলে তার মৃত্যুর জন্য সভাধিপতি, এক ঠিকাদার ও অপর দু’জনকে দায়ী করে গেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *