কলকাতা: মৃত্যু হল শহরের আরেক ঐতিব্যবাহী সিনেমা হলের৷ বৃহস্পতিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল ধর্মতলার রক্সি সিনেমাহল ৷ সূত্রের খবর কলকাতা পুর নিগমর সম্পত্তি এই সিনেমাহলটি পুর নিগম এক বেসরকারী সংস্থাকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছিল৷ ২০০৫ সালে সেই লিজের মেয়াদ শেষ হয়৷ পুর নিগমর তরফ থেকে লিজ পুনর্নবীকরণের জন্য প্রায় ৭৮ কোটি টাকা দাবি করা হলেও ঐ সংস্থা ঐ পরিমাণ অর্থ দিতে রাজী না হওয়ায় কলকাতা পুর নিগম আদালতের দ্বারস্থ হয়৷
গত বছর কলকাতা হাইকোর্ট জমি অধিগ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে ঐ সংস্থাকে রক্সি খালি করে দেওয়ার নোটিস নির্দেশ দেয় ও ৬ মাসের মধ্যে খালি করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলে৷ এদিকে, রক্সি বিল্ডিংয়ে বসবাসকারী ও দোকানদার মিলিয়ে মোট ২২ জন ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন৷ তারা পুর নিগম নির্ধারিত অর্থ দিয়েই ভাড়াটে হিসেবে থাকতে চান বলে জানিয়েছেন৷ তারা যাতে সুষ্ঠভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন সে বিষয়ে তারা মুখ্যমন্ত্রী ও মেয়রের কাছে আবেদন জানিয়েছেন৷
গতবছরেই কলকাতার একটি জনপ্রিয় সিনেমাহল ‘মিত্রা’ বন্ধ হয়৷ তারও আগে বন্ধ হয় এলিট৷ এবার কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার বুকে চিরতরের জন্য বন্ধ হয়ে গেল রক্সি৷ কিছুদিন আগেই হেরিটেজ বিল্ডিং-এর তকমা পেয়েছিল এই পেক্ষাগৃহটি৷ তবুও হাজার চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল রক্সি পেক্ষাগৃহকে৷ বৃহস্পতিবারেই শেষ শো প্রদর্শিত হয়েছে রক্সিতে৷ এই সিনেমাহলকে ঘিরেই রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নানা স্মৃতি৷
১৯৪৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘কিসমত’ ১৮৬ সপ্তাহ ধরে চলেছিল রক্সিতে৷ জানা যায় এই ছবিই রক্সিতে বসে সেইসময় দেখেছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসু৷ ১৯০৮-০৯ সালে অপেরা হাউজ হিসেবে পথ চলা শুরু করেছিল আজকের রক্সি৷ তখন তার নাম ছিল এম্পায়ার থিয়েটার৷ চল্লিশের দশকের শুরুতেই তা পরিবর্তিত হয়ে সিনেমা হলে পরিণত হয়৷ এই পেক্ষাগৃহে প্রথম প্রদর্শিত ছবির নাম ‘নয়া সংসার’৷
সিলভার স্ক্রিনের জনপ্রিয় অভিনেতা অশোক কুমার অভিনীত এই ছবিটির মাধ্যমেই রক্সি পেক্ষাগৃহের যাত্রা শুরি হয়৷ কিন্তু ঠিক কী কারণে বন্ধ হয়ে গেল এই শতাব্দী প্রাচীন সিনেমাহলটি, সেই বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত৷ তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মূলত মাল্টিপ্লেক্সের রমরমায় ও প্রতিযোগীতায় হেরে গিয়ে যেভাবে শহরজুড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে মেট্রো, লাইট হাউস, গ্লোব,-এর মতো একাধিক সিঙ্গেল স্ক্রিন, সেই কোপেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে রক্সিও৷ সূত্রের খবর, ব্রিটিশদের হাত ধরেই রক্সির পেক্ষাগৃহের মাথায় একটি বড় গম্বুজ বানানো হয়৷ যা এই পেক্ষাগৃহের অন্যতম আকর্ষণ হিসাবেই পরিচিত৷