ওয়াশিংটন: মহাকাশ গবেষণায় মহিলাদের অবদান দিন দিন উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠছে। মহিলা মহাকাশচারীদের একের পর এক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার ইতিহাস গড়লেন নাসার মহাকাশচারী ক্রিস্টিনা কোচ। দীর্ঘতম স্পেস ফ্লাইটে মহিলা মহাকাশচারী হিসেবে টানা ৩২৮ দিন অর্থাৎ প্রায় ১১মাস স্পেস স্টেশনে কাটিয়ে বিশ্বরেকর্ড করলেন এই মার্কিন মহাকাশ বিজ্ঞানী। গতবছর ডিসেম্বরে মার্কিন মহিলা নভশ্চর পেগি হুইটসনের টানা ২৯৮ দিন স্পেস স্টেশনে থাকার রেকর্ড ভেঙেছেন ক্রিস্টিনা।
বৃহস্পতিবার কাজাখস্তানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টে ১২ মিনিটে (ভারতীয় সময় বেলা ২টো ৪২মিনিট) 'সয়ুজ' ক্যাপসুলে দুই সহকর্মী ইতালির ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির মহাকাশচারী লুকা পারমিতাও এবং রাশিয়ান মহাকাশচারী আলেকসান্দ্র স্ক্ভারটসভের সঙ্গে পৃথিবীর মাটি ছুঁলেন এই মহাকাশচারী। নাসার এই মিশনে প্রথমবার সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত স্পেস ওয়াক করেন ক্রিস্টিনা ও আরএক মার্কিন মহাকাশ বিজ্ঞানী ডঃ জেসিকা মেয়ার। গতবছর ১৮ই অক্টোবর টানা সাত ঘন্টা স্পেস স্টেশনের বাইরে থেকে একটি বিকল পাওয়ার কন্ট্রোল মেশিনের ব্যাটারি পাল্টেছেন দুজনে। এরপর এবছর ১৫ এবং ২০জানুয়ারি আরও দুবার স্পেস ওয়াক করেন দুজনে। গতবছর ১৪ মার্চ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে অবতরণ করেন ক্রিস্টিনা। একাধিক প্রয়োজনে এই মিশনে মোট ছ-বার স্পেস ওয়াক করেন ক্রিস্টিনা।
এই মিশনে আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল স্পেস স্টেশনে থাকাকালীন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্রিস্টিনা ও তাঁর সহকর্মীরা একটি বিশেষ গবেষণা চালিয়েছেন ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রোটিনের ব্যবহার নিয়ে। নিজের এই সাফল্যে উচ্ছসিত ক্রিস্টিনা আগামী দিনে মহাকাশ গবেষণায় নারীদের ভূমিকা নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। ৪১ বছরের ক্রিস্টিনা কোচ জন্মসূত্রে মিচিগানের গ্র্যান্ড রাপিডস-এর, বেড়ে উঠেছেন নর্থ ক্যারোলিনায়। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাশাপাশি ফিজিক্সে মাস্টার ডিগ্রী করেছেন তিনি। মিশনে নাসার অপর মহিলা মহাকাশচারী ডঃ জেসিকা মেয়ার জন্মসূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিবিউ, মেইন-এর। তিনি একইসঙ্গে মেরিন বায়োলজিস্ট এবং ফিজিওলজিস্ট।
প্রসঙ্গত, এটি নাসার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সিঙ্গল স্পেসফ্লাইট। এর আগে ২০১৫ সালে স্টক কেলির একবছরের মিশন ছিল নাসার প্রথম দীর্ঘতম সিঙ্গল স্পেসফ্লাইট। তবে মহাকাশচারী হিসেবে দীর্ঘদিন স্পেস স্টেশনে থাকার সুবাদে মহিলাদের মধ্যে প্রথম মহাকাশচারী হুইটসনকেই শুধু টেক্কা দিয়েছেন তা নয় এর আগে দীর্ঘদিন স্পেস ফ্লাইটে কাটানো ৫ম ও ৬ঠ স্থানাধিকারী দুই পুরুষ মহাকাশচারী রাশিয়ার ইউরি রোমানেনকো এবং সের্গেই ক্রিকেলেভের রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গেছেন ক্রিস্টিনা। উল্লেখ্য, মহাকাশ গবেষণায় প্রথম মহিলা স্পেসওয়াকার ছিলেন রাশিয়ান স্বেতলানা সাবিতস্কায়া, যিনি ১৯৮৪ সালের ২৫ জুলাই ইউএসএসআর- এর 'সালিয়ট সেভেন' স্পেস স্টেশনের বাইরে ৩ ঘন্টা ৩৫ মিনিট কাটিয়েছিলেন।
তবে দীর্ঘতম সিঙ্গল স্পেসফ্লাইটের মহাকাশচারী হিসেবে এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার ভ্যালারি পোলিয়াকভের রেকর্ডের ধারেকাছে পৌঁছেতে পারেননি কোনো মহাকাশচারী, যিনি প্রথমে সোভিয়েতে এবং পরে রাশিয়ান – মহাকাশ স্টেশন মীর-এ ১৯৪সালের ৮ জানুয়ারী থেকে ১৯৯৫ সালের ২২ মার্চ পর্যন্ত ৪৩৭ দিনেরও বেশি সময় ধরে স্পেস স্টেশনে কাটিয়েছিলেন।