কলকাতা: কলকতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দলবদল, ৯০ দশকে কলকাতা ফুলবলের দলবদলের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। দলবদলের বাজারে শোভনের সঙ্গে চিমা বা কৃষানু-বিকাশ-সুব্রত-সুদীপদের তুলনা টানা যেতে পারে। তবে একথা ঠিক, দুই নৌকায় পা দিয়ে রাজনীতিতে যে নজির সৃষ্টি করেছেন শোভন, তার তুলনা বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে দ্বিতীয়টি আছে কিনা তা এখন গবেষণার বিষয়।
একটা সময় বাংলার রাজনীতি উচ্চ আদর্শে অধিষ্ঠিত ছিল। প্রবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝেও কিছু পাওয়ার জন্য 'ক্যাম্প' বলানোর কথা ভাবা যেত না। যদিও, 'অপমানিত' সমীর পুততুন্ড, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় রা নিজের দল বানিয়ে সাফল্য পান নি। সাফল্য পেয়েছেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু, কিন্তু সম্মান বা পাওনার লোভে বিরোধী শিবিরে নাম লেখানোর খুব বেশি নজির নেই। তা শুধু কলকাতা ফুলবল ময়দানেই দেখা যেত। কিন্তু, ময়দানেও সুব্রত ভট্টাচার্যের মত খেলোয়াড় ছিলেন যারা পাওনা বা অপমান কে পাত্তা না দিয়ে ঘরের ছেলে হয়ে থেকে গিয়েছিলেন বছরের পর বছর।
দিন বদলেছে। বিধান সভায় বাম, কংগ্রেস বিধায়কের অনেকেই সুবিধা এবং পাওনার জন্য তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন। বিজেপিও বহু তৃণমূল , বাম, কংগ্রেস নেতা, বিধায়ক এবং সাংসদকে নিজের দলে আনতে পড়েছে। রাজনীতি এখন ময়দানের দল বদলের মতই। তবে, লেন দেন প্রকাশ্যে আসে না।
দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে শোভন মমতার ছায়া সঙ্গী। শোনা যায়, তৃণমূল কংগ্রেস স্থাপিত হওয়ার সময় শোভন যুব কংগ্রেস নেতা হিসেবে দেশের বাইরে ছিলেন। সম্ভবত জাপানে। খবর পেয়েই দেশে ফিরে এসে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তিনি ছিলেন বা আছেন মমতার প্রিয়পাত্র। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি চলে যাওয়ার পরও তাঁর মোবাইলে রিং-টোন বাজত, আমার ভিতর ও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে …।
আপাতত যা পরিস্থিতি, তৃণমূলের কাছে শোভনের সাফ কথা, রত্নাকে তা তাড়ালে তিনি তৃণমূলে যাবেন না। অন্যদিকে, কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে মেয়র পদেপ্রার্থী হিসাবে শোভনকে চায় বিজেপি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা নাকি শোভন কে চেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শোভনের হাতে অস্ত্র হিসাবে রয়েছে পদ্মফুল। যা তিনি ঘাসফুলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে, মেয়র পদের দাবি রেখেই তিনি তৃণমূলে ফিরতে চান। শোভনের কথা ভেবে নিয়ে আপাতত রত্নাকে বেহালা থেকে গুরুত্বহীন করার পথে তৃণমূল। শোভনের জন্য বিজেপির অফারও ভালোই। মেয়র পদে প্রার্থী অবশ্যই। বিজেপি তাঁকে সামনে রেখেই লড়তে চায়। কিন্তু, শোভনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বৈশাখী বিজেপি বিরোধী।
তবে, এটাও ঠিক, বৈশাখী মোড়ে এসেই বিজেপির রথ আটকে যায়। শোভন চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছয় না। বৈশাখী চান 'শোভন-বিজেপি' যাতে বাস্তবতা না পায়। কারণ, একটাই বিজেপি বৈশাখকে কিছুতেই জায়গা দিতে রাজি নয়। বিজেপির শুধু ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শোভন চাই। কিন্তু, বৈশাখী তা মানবেন কেন। তিনি চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝে দাঁড়িয়ে শোভন কে তৃণমূলে টেনে নিন। হারানো সুর মিলে যাক। আপাতত যা পরিস্থিতি, বৈশাখীর ইচ্ছায় পূর্ণতা পেতে চলেছে। দল বদলের বছর ঘোরার আগেই শোভন ফের বিজেপি থেকে তৃণমূল মুখী। শোভন আদতেই বঙ্গ রাজনীতির চিমা ওকরি।