ঢাকা: 'প্রেম'- দুটি অক্ষরের এই ছোট্ট শব্দটির ব্যাপ্তি পৃথিবী ছাড়িয়ে কল্পনার উড়াণে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেও বিস্তৃত। আদি অনন্ত কাল ধরে এই কল্পনা স্বর্গীয় ও ঐশ্বরিক। মনীষীদের কথায় প্রেম নাকি ঈশ্বর প্রদত্ত। তবে সাধারণ অর্থে প্রেম বলতে আমরা যা বুঝি তার সংজ্ঞা হল দুই মানব-মানবীর অন্তরিক নিবিড় সম্পর্ক। কিন্তু বর্তমানে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই সংজ্ঞায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। পড়াশোনায় চাপ, কর্মব্যস্ততার চাপ, মানুষের ভিড়ে সব সম্পর্কের মত প্রেমের সম্পর্কেও তৈরি হয়েছে দুরত্ব। আর দুরত্ব যত বেড়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অবিশ্বাস। ফলে বন্ধুত্ব-প্রেম কোনো সম্পর্কেই আর তেমন শক্ত বাঁধন নেই।
দায়িত্ব বোধ, সহমর্মিতা, সহানুভূতি এমনকি এই সবকিছু মানিয়ে-গুছিয়ে নেওয়ার জন্য ন্যূনতম সময়টুকুও এখনকার কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের হাতে নেই। ফলতঃ 'প্রেম' শব্দটা নিজের মাহাত্ম্য হারিয়েছে। খুব সহজলভ্য, পোশাকি আর সুযোগসন্ধানের মাধ্যম হয়ে উঠছে বর্তমানে প্রেমের সম্পর্ক। এই সুন্দর সম্পর্কে দিন দিন বাড়ছে জটিলতা। পড়াশোনা, কাজের চেষ্টা লাটে তুলে প্রেমের মারণ খেলায় মেতে উঠেছে নাবালক সাবালক নির্বিশেষে। বাড়ছে হতাশা। হিংসা, প্রতিহিংসার বলি হতে হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রেমের মাসুল দিতে।
সামনেই 'ভ্যালেন্টাইন ডে' আর তার আগে এই উন্মাদ প্রেমের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে গতবছর পথে নেমেছিল প্রতিবেশী বাংলাদেশের যুবসমাজ। একবছর আগের এই পদযাত্রার ভিডিও এবছর ভ্যালেন্টাইন ডে-র আগে সোশ্যাল-মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। ভিডিও দেখা যাচ্ছে 'প্রেমবঞ্চি সংঘ' নামে একটি সংগঠনের একদল যুবক-যুবতী রীতিমতো প্ল্যাকার্ড হাতে পদযাত্রা করে শহরের পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। পথচলতি অনেকেই পা মেলাচ্ছেন এই অভিনব সচেতনতার উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে, তাঁদের উৎসাহ জোগাতে। জানিয়েছেন প্রেম সম্পর্কে নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত। জনমত লিখে রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, সমস্ত মহামনীষীদেরই ব্যক্তিগত মতামত রয়েছে এই প্রেম সম্পর্কে, যা সর্বকালীন। তবে মহামনীষী না হলেও সাম্প্রতিক কালের স্বনামধন্য গণিতজ্ঞ হানা ফ্রাই-এর লেখা 'ম্যাথামেটিক্স অফ লাভ' বইটির কিছু কথা আধুনিক প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সেখানে তিনি বলেছেন, মনের মানুষকে খুঁজে পাওয়া কোনও 'র্যানডম অ্যাকশন' নয়। অঙ্কের নিয়মে চললে ঠিকঠাক মানুষ সহজে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বরং বাড়ে। তিনি বলেছেন, বয়স, পেশা, ভাষা, পছন্দ-অপছন্দ এই এতসব কিছু দেখেশুনে মিশতে গিয়েই ছোট হয়ে যায় পরিসর আর তাই আদর্শ সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তার চেয়ে মেলামেশার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা কম করলে বরং মনের মানুষ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। পৃথিবীর বহু সফল দম্পতি কিন্তু পরস্পর বিপরীত মেরুর মানুষ।
তাই পরিবেশ এবং সমাজ সচেতনতার সঙ্গে এই প্রেম সচেতনতা নিয়ে প্রচার শুধু অভিনবই নয় নিঃসন্দেহে নতুন বার্তাও বহন করছে। বলা যায়, যুবসমাজের আধুনিক চিন্তাধারার এ এক ইতিবাচক প্রতিফলন।