কলকাতা: বাংলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত লন্ডন ফেরত বাঙালি তরুণ৷ ভর্তি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে৷ আক্রান্ত যুবকের মা রাজ্য সরকারের পদস্থ আমলা৷ এর আগেও হাসপাতালে দু’বার ভর্তি হন হওয়ার পরমর্শ দেওয়া হলেও তা উড়িয়ে দেন ওই আমলা-পুত্র৷ পরে ওই যুবকের শরীরে মিলেছে করোনা ভাইরাস৷ যুবককে ভর্তি করা হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে৷ সংক্রমণ রুখতে আক্রান্তে আমলা মা, বাবা ও গাড়ির চালককে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে নজরদারিতে রাখা হয়েছে৷ গত দু’দিনে ওই আমলাপুত্র কোথায় কোথায় সময় কাটিয়েছেন, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন, তাঁদের তালিকাও চাওয়া হয়েছে৷ গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর প্রশ্ন উঠছে আমরা পরিবারের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে৷
গতকাল ওই আমলাপুত্রের নমুনা পরীক্ষা হওয়ার পর বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ জানা গিয়েছে তার মা-বাবা কেউ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতলে নজরদারিতে রাখা হয়েছে৷ আক্রান্ত যুবকের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতলে আমার পরিবারকে ভর্তি রাখা হয়েছে৷ তাদের নমুনাও সংগ্রহ করা হতে পারে৷ পরিবারের লালারস পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গিয়েছে৷ তরুণ গত দু'দিনে কাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার তালিকা ও জানতে চাওয়া হয়েছে৷ প্রয়োজনে তাদেরও বেলেঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে বলে খবর৷ লন্ডন ফেরত যে তরুণ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার মা নবান্নের পদস্থ আমলা৷ সূত্রের খবর, গতকাল তিনি দপ্তরে গিয়েছিলেন৷ সেই কারণে রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তরেও সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ আর তার জেরে আজ পূর্ত দপ্তরের চারটি দল নবান্ন সাফাই অভিযান শুরু করেছে৷ একইসঙ্গে রাইটার্স বিল্ডিংয়েও শুরু হয়েছে সাফাই অভিযান৷
আতঙ্ক ছিলই, এবার এরাজ্যেও মিললো প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ। কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ল উচ্চপদস্থ আমলার ১৮ বছর বয়সি ব্রিটেন ফেরত ছেলের শরীরে। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর,১৫ মার্চ রবিবার লন্ডন থেকে কলকাতায় ফেরেন বাইপাস লাগোয়া পঞ্চসায়র থানা এলাকার এক অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা ওই যুবক। লন্ডনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। তাঁর মা নবান্নের উচ্চপদস্থ আমলা। প্রাথমিকভাবে কোনো উপসর্গ না থাকায় রবিবার লন্ডন থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে কলকাতায় ফিরে বিসরাসরি নিজের বাড়িতে চলে যান ওই তরুণ।
নবান্নের এক আধিকারিক বিষয়টি জানতে পেরে ওই আমলাকে ব্রিটেন ফেরত ছেলেকে নিয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। তবে পরিবারের তরফে ওই তরুণকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরাও ওই তরুণকে বেলেঘাটা আইডি তে যাওয়ার পরামর্শ দেন কিন্তু চিকিৎসকদের কথায় কর্ণপাত না করে সেখান থেকে সরাসরি বাড়ি চলে যান ওই তরুণ। সেদিন থেকেই তাঁর শরীরে সামান্য উপসর্গ দেখা দেয়। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে ওই তরুণকে বেলেঘাটা আইডিতে নিয়ে আসা হয়। সেদিন ওই তরুণ সহ ৭০ জনের নমুনা কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য এনআইবি পুনে এবং নাইসেডে পাঠানো হয়েছিল। রাতে রিপোর্টে দেখা যায় তিনি করোনা পজিটিভ। বাকিদের রিপোর্ট যদিও নেগেটিভ ছিল। রিপোর্ট হাতে আসার পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দপ্তর। সঙ্গে সঙ্গেই আইভি হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয় তাঁকে। রাতেই নদীয়ার জেলাশাসককে জরুরি ভিত্তিতে নির্দেশ দিয়ে ওই তরুণের বাবাকে কলকাতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে সরকার। তাঁর মা যেহেতু সঙ্গেই ছিলেন তাই তাঁকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে৷ সঙ্গে যে গাড়িতে করে তিনি বাড়ি ফেরেন, সেই চালককেও রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে৷ রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার জানিয়েছেন, ওই তরুণের আবাসন থেকে নবান্ন, এমনকি বাঙুর হাসপাতালেও যাদের সংশ্পর্শে এসেছিলেন তাদের সঙ্গে যোযোগ করা হচ্ছে। এছাড়া যে বিমানে তিনি এসেছেন, সেই বিমানের সহযাত্রীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। কন্ট্র্যাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে এঁদের প্রত্যেককে হাসপাতালে, অথবা বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।
এদিকে করণা আক্রান্ত তরুণের মা নবান্নের আমলা এবং তিনি ছেলের সংস্পর্শে ছিলেন। সোমবার থেকে তিনি নিয়মিত অফিসেও এসেছেন। তরুণের শরীরে করো না সংক্রমণ ধরা পড়ায় বুধবার সকাল থেকেই নবান্ন ভাইরাস মুক্ত করার কাজ শুরু হয়। সিল করে দেওয়া হয় ওই আমলার বসার ঘর। আগামী সাত দিন পর্যন্ত নিয়মিতভাবে এই স্যানিটাইজেশনের কাজ চলবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গেছে।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইংল্যান্ডে থাকাকালীন ওই যুবক তাঁর এক বান্ধবীর সঙ্গে একটি পার্টিতে যান৷ সেখানে উপস্থিত অনেকের শরীরেই মিলেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ৷ এমনকি তার বান্ধবীও করোনায় আক্রান্ত৷ তবে সরকারি নির্দেশিকা ও সমস্তরকম ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিদেশ ফেরত ওই তরুণকে কেন সরাসরি আইডি হাসপাতাল বা পরীক্ষার জন্য অন্যকোন চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়নি, সেবিষয়ে সরকারের তরফে খোঁজখবর শুরু হয়েছে।