মানুষকে মনুষ্যত্ব শেখাচ্ছে আদিম মানবের প্রজাতি, ভাইরাল ওরাংওটাংয়ের ছবি

মানুষকে মনুষ্যত্ব শেখাচ্ছে আদিম মানবের প্রজাতি, ভাইরাল ওরাংওটাংয়ের ছবি

ওয়াশিংটন:  ভালোবাসার সংজ্ঞা যেমন ভিন্ন হয় তেমনই ভিন্ন হয় তার স্থান,কাল,পাত্র। যেমন সম্প্রতি একটি ছবি স্যোশাল মিডিয়ায় সাড়া ফেলেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি ওরাংওটাং তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে একবুক জলে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির দিকে। জিওলজিস্ট অনিল প্রভাকর ইনস্টাগ্রামে এই ছবিটি পোস্ট করেন। সঙ্গে লেখেন “তোমাকে সাহায্য করতে দেবে আমাকে? বর্তমান সময়ে যখন মানুষের মধ্যেই মনুষ্যত্ব বোধের মৃত্যু হচ্ছে, তখন পশুরা আমাদের মূলে ফিরে যাওয়ার পথ দেখাচ্ছে৷

ছবিটি বোর্নিওর রেইনফরেস্টের। এশিয়ার একমাত্র বড় বানরের প্রজাতি ওরাংওটাং-এর বেশিরভাগই ইন্দোনেশিয়ার এই বোর্নিও এবং সুমাত্রায় পাওয়া যায়, বাকি ১০% মালয়েশিয়ার সাবাহ এবং সারাওয়াকে পাওয়া যায়। বোর্নিও ওরাংওটাং সারভাইভাল ফাউন্ডেশনের অনুসারে অনুমান করা হয় যে গত তিনটি প্রজন্মের মধ্যে বোর্নিয়ান ওরাংওটাং-এর সংখ্যা ৮০% এরও বেশি কমে গেছে। এমনিতেই মানবসভ্যতার বিকাশের একাধিক কারণে অস্তিত্ব সংকটের মুখে এই অরণ্যের বনমানুষরা। তারওপর অরণ্য জীবনে এদের প্রধান শত্রু হয়ে উঠেছে মারাত্মক বিষধর কিছু সাপ।

বোর্নিওর উষ্ণমন্ডলীয় রেইনফরেস্টে ১৬০ টি সাপের প্রজাতি রয়েছে। এই অঞ্চলের ওরাংওটাংদের সুরক্ষিত রাখতেই ১৯৯১সালে স্থাপিত হয় বোর্নিও ওরাংওটাং সারভাইভাল ফাউন্ডেশন। ৪০০ সদস্যের এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বর্তমানে রেইনফরেস্টের অন্তত সাড়ে ছশো ওরাংওটাং-এর দেখভালের কাজে নিযুক্ত। এই প্রাণীগুলিকে সাপের হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়ম করে সংস্থার কর্মীরা নদী পরিষ্কার করে সাপ তাড়ানোর চেষ্টা করেন এবং বনের মধ্যে নানান বিপদ থেকে সতর্ক করতে ওরাংওটাংদের প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন।

সংস্থার উদ্যোগে বন সংরক্ষণ অভিযানে রেইনফরেস্টের এই অঞ্চলগুলি থেকে যখন সাপ তাড়ানোর কাজ চলছিল। কেরলের বাসিন্দা জিওলজিস্ট অনিল প্রভাকর তখন কর্মসূত্রে ওই অঞ্চলেই সফররত ছিলেন। এক সংরক্ষণ কর্মী একটি জলাশয় থেকে সাপ তাড়ানোর  কাজ করতে গিয়ে সেই জলাশয়ের কাদায় আটকে পড়েন। তখনই এক ওরাংওটাং এসে হাত বাড়িয়ে দেয় তাঁর দিকে। যেন ওই বন কর্মীকে সাহায্য করতে চায় সে। কোনো প্রস্তুতি নেই তাসত্ত্বেও এমন এক বিরল মুহূর্ত হাতছাড়া করতে পারেননি অনিল। কোনমতে ক্যামেরা অন করে পর পর বেশ কয়েকটি ছবি তুলে ফেলেন সেই মুহুর্তের। পেশাদার ফটোগ্রাফার না হলেও ফটো তোলা তাঁর নেশা। কিন্তু বেশ কয়েকমাস আগে নিতান্তই অপেশাদার হাতে তোলা এই ছবিটি স্যোশাল মিডিয়ায় এতটা জনপ্রিয়তা পাবে তা ভাবতেও পারেননি। এপর্যন্ত পনেরো হাজারেরও বেশি 'লাইক' পেয়েছে তাঁর এই পোস্ট।

এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনিল জানিয়েছেন ওরাং ওটাং এর এই অদ্ভুত আচরণ দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান এবং এই মর্মস্পর্শী মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেন। যদিও অনিল জানিয়েছেন, শেষপর্যন্ত ওই ওরাংওটাং এর সাহায্য নেননি ওই বনকর্মী । তাঁর কাছে এর কারণও জানতে চেয়েছিলেন অনিল। উত্তরে বনকর্মী জানিয়েছেন, এই ওরাংওটাংরা একেবারেই বন্য তাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে মনে হলেও ওদের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কি হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বোঝা যায়না। এছাড়াও তাদের এই কাজে বন্য প্রাণীদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করার ওপর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।

গতবছর সেপ্টেম্বর থেকে দীর্ঘ সময় ব্যাপী দাবানলের জেরে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিওর ৪০ হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরফলে প্রাণ হারায়  অস্ত্বিত্বের সঙ্কটের সম্মুখীন বহু ওরাংওটাং। যারা প্রাণে বেঁচে যায়, পর্যাপ্ত খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে তাদেরও বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।। অন্যদিকে জনবিস্ফোরণ, দূষণ এবং ধীরে ধীরে সাগরে তলিয়ে যাওয়া ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী শহর জাকার্তা রাজধানীর শিরোপা হারাতে চলেছে। পরিবর্তে বোর্নিও দ্বীপের পূর্ব প্রান্তের ইস্ট কালিমানতান প্রদেশকেই দেশের রাজধানী হিসাবে বেছে নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। ফলে আগামী দিনে বোর্নিওর এই রেইনফরেস্ট আর ওরাংওটাং সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের জন্য এক ভয়ঙ্করভাবে ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে বলাই যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *