করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর ভাইরাস ছড়িয়ে সমাজে! কীভাবে থাকবেন মুক্ত?

করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর ভাইরাস ছড়িয়ে সমাজে! কীভাবে থাকবেন মুক্ত?

নয়াদিল্লি: করোনা নিয়ে বেড়ে চলা উদ্বেগের মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে চাউড় হচ্ছে উদ্ভট সব পথ্য৷ করোনাভাইরাস নিয়ে বয়ে চলেছে  ভুল তথ্যের স্রোত৷ দোসর হয়ে জুড়েছে কুসংস্কার আর কল্পনা৷

ভারতে ক্রমেই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা৷ সমান তালে বাড়ছে গুজব৷ মনিপুর, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক এবং করলের মতো রাজ্যে ছত্রাকের মতো গজিয়ে উঠছে স্বীকৃতিবিহীন ‘করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র’৷

বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স (এনআইএমএইচএএনএস)-এর সাইকোলজিস্ট দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বিজ্ঞান ভিত্তিত জার্নাল ‘নেচার’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আয়ুর্বেদ বা হার্বাল টনিকের নামে এই সকল কেন্দ্রগুলি থেকে রোগীদের জোড়াল স্টেরয়েড ওষুধ দেওয়া হচ্ছে৷ অনেক সময় আবার দেওয়া হচ্ছে রাউলফিয়া বা ইওহিম্বাইন৷’’

করোনা রুখতে বিজেপি সাংসদ সুমন হরিপ্রিয়ার দাওয়াই, ‘গোবর’৷ তাঁর কথায় গোবরেই কেল্লাফতে হবে করোনা৷ ক’দিন আগেই তো করোনা রুখতে ‘গোমূত্র’ পার্টির আয়োজন করেছিল অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা৷ তাঁদের দাবি, গোমূত্র পান করলেই নাকি রোখা যাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ৷ হিন্দু মহাসভার সভাপতি স্বামী চক্রপানির দাবি, যাঁরা মাছ-মাংস খান তাঁদের শাস্তি দেওয়ার জন্যই এই মহামারি তৈরি হয়েছে৷ তাই ‘গোমূত্র’ পার্টিতে হিন্দু মহাসভার সদস্যরা দেদার গোমূত্র পান করে৷ এরপর হাত জোড় করে করোনা ভাইরাসকে এদেশ থেকে চলে যাওয়ার স্লোগান তোলেন তাঁরা৷

কলকাতাতেও একই ধরনের একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল৷ কিন্তু গোমূত্র পান করে দলের এক সদস্য অসুস্থ হওয়ার পরই জনৈক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ৷
করোনার আরও এক ওষুধ বাতলেছেন হরিয়ানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ৷ ট্যুইট করে তিনি বলেন, ‘‘মাছ-মাংস খাবেন না৷ নিরামিশ খান৷ করোনা ভাইরাসের মতো ভাইরাস সৃষ্টি করবেন না৷ পশুর মাংস মানবজাতির কাছে একটি বিপদ৷’’

এদিকে করোনাকে সংক্রমণকে হাতিয়ার করে ব্যবসার ফাঁদ পেতেছে বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী৷ বাজারে নিয়ে আসছে করোনা প্রতিরোধমূলক হরেক প্রোডাক্ট৷ সম্প্রতি এমনই এক মাদুরের খোঁজ মিলেছে বাজারে৷ দাবি, এই মাদুর নাকি করোনা সংক্রমণ রুখতে সক্ষম৷ আবার লখনউয়ের রাস্তায় ছেয়ে গিয়েছে ‘করনো বাবা’র পোস্টারে৷ এই বাবার দাবি, মাত্র ১১ টাকার বিনিময়ে করোনাকে খতম করবেন তিনি৷ এই খবর প্রচার হতেই ‘করোনা বাবা’-কে গ্রেফতার করেছে ওয়াজিরগঞ্জ থানার পুলিশ৷

করোনা নিয়ে গানও বেঁধে ফেলেছেন এদেশের ‘শিল্পী’রা! ইউটিউবে ঘুরপাক খাচ্ছে করোনা কীর্তন৷ ইতিমধ্যে এক লক্ষ মানুষ সেই কীর্তন শুনেও ফেলেছেন৷ এর আগে একদল তরুণকে দেখা গিয়েছিল ‘করোনাভাইরাস গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে৷ হোলির সময় তোলা হয়েছিল ওই ছবিটি৷ যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আথাওয়ালের ‘গো করোনা, গো করোনা’ স্লোগান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিল ওই তরুণের দল৷

করোনা সংক্রমণ রুখতে কাঁচা আদা, রসুন, পিঁয়াজ খাবার গুজবও ঝড়ের বেগে ছড়াচ্ছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যখন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বলছেন, তখন গুজবের হাওয়ায় ভাসছে এদেশের মানুষ৷ পান করছেন গোমূত্র৷ হাত ধোয়ার বদলে কিনছেন করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম মাদুর৷ আর মাস্ক পরার বদলে গাইছেন করোনা কীর্তন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 4 =