বাংলায় কাজের অভাব নেই, রোগ হলেই তাড়িয়ে দেয়, তাও কেন কাজে যাবেন? প্রশ্ন মমতার

বাংলায় কাজের অভাব নেই, রোগ হলেই তাড়িয়ে দেয়, তাও কেন কাজে যাবেন? প্রশ্ন মমতার

কলকাতা: রাজ্যে ফের মিলল করোনা আক্রান্তের হদিশ৷ এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন৷ কিন্তু দেখার বিষয়, যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা সকলেই এসেছেন বিদেশ থেকে৷ বাইরে থেকেই রাজ্যে ঢুকছে করোনাভাইরাস৷ এর উপর মুম্বই থেকে স্পেশ্যাল ট্রেনে করে রাজ্যে ফিরতে শুরু করল পরিযায়ী শ্রমিকরা৷ যার জেরে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের কপালে৷ এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বাংলায় কাজের অভাব নেই৷ যে রাজ্য রোগ হলে কর্মীদের তাড়িয়ে দেয়, সে রাজ্যে সারা বছর কাজ করতে যাবেন কেন?

এদিন এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সমস্যাটা বাংলাকে নিয়ে নয়৷ সস্যাটা বাইরের৷ আমরা একটা স্পেশ্যাল ট্রেন চাইলে কোনও দিন দেয়না৷ অথচ এই সংকটের মুহূর্তে সকল পরিযায়ী শ্রমিকদের এরাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ যে সকল পরিযায়ী শ্রমিকের বাংলায় ঘরবাড়ি আছে, তাঁরা নিশ্চই রাজ্যে ফিরবেন৷ আমরা তাঁদের তাড়াতে পারব না৷ তবে বাড়ি ফেরার পর সতর্ক থাকুন৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,‘‘ আপনি যে কাজটা বাইরে করছেন, সে কাজটা বাংলাতেও হচ্ছে৷ সোনার কাজ এখন বাংলাতেও হয়৷ এখানে পাঁচ লক্ষ লোক কাজ করেন৷ এ রাজ্যে কাজের কোনও অভাব নেই৷ আমাদের ভাইবোনেদের মেধা খুব বেশি৷ সেই মেধা নিয়ে যাচ্ছে অন্য রাজ্য৷ ভালো সময়ে আপনাদের ব্যবহার করছে৷ আর দুঃসময়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে৷ আমার আবেদন, কাজের জন্য ভিন রাজ্যে যাবার কোনও প্রয়োজন নেই৷ এ রাজ্যে যথেষ্ট কাজ রয়েছে৷

১০০ দিনের কাজের উদাহরণ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন অধিকাংশ সময়েই ১০০ দিনের কাজের জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যায় না৷ এর একটাই কারণ, সবাই কিছু না কিছু কাজ করছেন৷ কিছু না থাকলে ছোট দোকান করুন৷ সাধারণ মানুষের জন্য এরাজ্যে কর্ম তীর্থ, কর্ম সাথী তৈরি করা হয়েছে৷ প্রয়োজনে সবজি নিয়ে বাজারে বসুন৷ বাংলার বাজার খুব ভালো৷ বাংলায় যা আছে অন্য কোনও রাজ্যে তা নেই৷ এর আগেও বিস্ফোরণের সময় বাংলার মানুষকে মেরে তাড়ানো হয়েছিল৷ দিল্লি থেকেও বিতাড়িত হতে হয়েছিল অনেক শ্রমিককে৷ তাদের বলব, আপনারা এখানেই সুখে শান্তিতে বাস করুন৷ তবে যাঁরা আসছেন সাবধানে থাকুন৷ সতর্কতা অবলম্বন করুন৷

মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৷ ৩১ মার্চ পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে সে রাজ্য থেকে উত্তর ও পূর্ব ভারতের জন্য প্রায় ১৫ টি স্পেশ্যাল ট্রেন চালু করেছে রেল৷ বিশেষ করে মুম্বই ও পুণে থেকে দুটি ট্রেন আসছে হাওড়ায়৷ যার ফলে মহারাষ্ট্র থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকরা৷ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রেলে কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই৷ এই বিষয়ে গত এক মাস ধরে ক্রমাগত বলার পরেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ৷ ,স্টেশনগুলিতে না আছে কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা, না আছে কোনও ইকুইপমেন্ট বা ওষুধ৷ গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ রেলের গাফিলতির কথা তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি আরও বলেন, রেলের কোনও নজরদারি নেই৷ প্লেন থেকে নেমেও বহু মানুষ ট্রেনে চেপে চলে আসছেন৷ আগামী দুই-তিন সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এই পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আগামী ১০ দিনের জন্য দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করার আর্জিও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, এর পরেও ট্রেন চললে রাজ্যের বাইরেও আটকে দেওয়া হবে রেল৷

হাজার হাজার লোক বিনা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ট্রেনে চেপে চলে আসছেন৷ এতে সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বাড়ছে৷ বর্তমানে স্টেজ টুতে রয়েছে ভারত৷ ক্রমেই স্টেজ থ্রির দিকে এগোচ্ছে দেশ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম সপ্তাহ খুবই ভয়াবহ৷ এক দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫টি বেড়ে গিয়েছে৷ এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে যাঁরা রাজ্যে পৌঁছেছেন, তাদের পরিবারের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, ভিন রাজ্য থেকে আসা পরিবারের সদস্যদের আপাতত বাড়ির মধ্যেই রেখে দিন৷ তারা যেন বাইরে না বেরয়৷ কারোর শরীরে সংক্রমণ থাকলে নিশ্চই চিকিৎসা করবেন৷ লক্ষণ বুঝলেই হাসপাতালে যান৷ তার আগে বাড়িতে থাকুন৷ বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে দেবেন না৷ পরিবারের অন্যান্য লোকের সঙ্গেও মিশতে দেবেন না৷ তাঁদের আলাদা ঘরে রেখে দিন৷ আলাদা ঘর না থাকলে একটা মশারির মধ্যে থাকতে বলুন৷ সবটাই সাবধনতা অবলম্বন করার জন্য বলা হচ্ছে৷ তিনি আরও বলেন, ই বক্তির জামা কাপড় বা সাবান-বালতি অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না৷ তিনি যে থালায় খাচ্ছেন সেই থালায় কেউ খাবেন না৷ এক্ষেত্রে বাড়ির লোকেদের গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্সও দেন মুখ্যমন্ত্রী৷

এদিকে, করোনাসংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের চাহিদা৷ অধিকাংশ দোকানেই স্টক নেই৷  এক্ষেত্রে কী করবে সাধারণ মানুষ? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অ্যাকলোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানেটাইজারের বরাত দেওয়া হয়েছে৷ প্রথমে তা স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হবে, এরপর পুলিশকর্মী ও যাঁরা রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন তাঁদের দেওয়া হবে৷ তার পরই বাজারে ছাড়া হবে এই স্যানিটাইজার৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিন নিজেও দিনে তিন বার সবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করেন৷ দু’বার অন্তত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন৷ আন্তর্জাতিক উড়ান নিয়েও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, বিমান বন্ধ করার এক্তিয়ার রাজ্যের নেই৷ তবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা বন্ধ করার আবেদন জানানো হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + nine =