কলকাতা: করোবা সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই আশঙ্কায় গোটা দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ পিছনে বাংলা৷ জারি লকডাউন৷ এই পরিস্থিতির মধ্যেও মিড ডে মিলের মতো জরুরি পরিষেবা যাতে থকমে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারও রাজ্যের ১ কোটি ১২ লক্ষ পড়ুরার পরিবারকে দু’কেজি চাল-আলি শিক্ষকদের দিয়ে বিলি বণ্টনের উদ্যোগ নিয়েছে৷ কিন্তু, সেই বিলিবণ্টন ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে৷ সরকারের নির্দেশ ঘিরে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শিক্ষকদের একাংশ৷ যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষককে বদলি ঘিরেও উঠছে প্রশ্ন৷ একই সঙ্গে ২১ দিনের লকডাউন পরিস্থিতিতে যাতে খাদ্যের কোনও অভাব দেখা না দেয়, তা নিশ্চিত করতেও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ারও আর্জি জানিয়েছেন শিক্ষকদের একাংশ৷
সরকারের নির্দেশ না মেনে অভিভাবকদের সঙ্গে যদি পড়ুয়ারা স্কুলে গিয়ে মিড ডে মিলের চাল-আলু সংগ্রহ করে, তাহলে তার দায় প্রধান শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষের নয়৷ অথচ সেই কারণে দেখিয়ে বদলি ঘিরে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শিক্ষকদের একাংশ৷ অবিলম্বে এই ব্যবস্থা বন্ধ রাখার জানিয়েছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন৷
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নয়া আর্জি জানিয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষকও শিক্ষাকর্মী সমিতি৷ শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ পোদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘করোনা রুখতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ অভাবনীয়৷ করোনার মতো সুনামিতে সারা বিশ্বের সঙ্গে আমরাও আক্রান্ত৷ ফলে আগামী ২১ দিন আমাদের গৃহবন্দি থাকতে হবে৷ মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই এই অসুখের একমাত্র চিকিৎসা৷ এক্ষেত্রে আমাদের চারপাশের বহু মানুষ রয়েছেন যারা অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল৷ তাঁদের প্রবল সমস্যায় পড়তে হবে৷ দৈনিক শ্রমজীবী মানুষ ও গরিব মানুষের পরিবার ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে জীবন ও জীবিকা চালানোই দুরূহ হয়ে পড়বে৷গোটা পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম শহরের কোটি কোটি গরিব ছাত্র-ছাত্রী অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হবে৷ এই পিছিয়ে থাকা ও আমাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত কয়েক কোটি শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা আপনার কাছে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করছি৷ আমাদের প্রস্তাব প্রতিটি গ্রাম ও শহরে ভোটার তালিকা দেখে সরকারিভাবে প্রতিটি পরিবার পিছু তিন সপ্তাহ ধরে প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল ডাল আলু রেশন দোকানে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায় তা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হোক৷ সরকারি উদ্যোগে এই সরবরাহ নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা রাজ্য সরকার রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষ করোনা ফান্ডে দেওয়ার জন্য আবেদন জানাক৷ আমরা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষা কর্মীরা এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি৷ এছাড়াও আমাদের দাবি, আপনি যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য ও কারজু নগর স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক কাজী মাসুম আক্তারের প্রতি যে শাস্তিমুলক পত্র পাঠানো হয়েছে ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করুন৷ আশাকরি অবিলম্বে আপনি এই বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন৷ তাদের শাস্তি মূলক পত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেবেন৷’’
শিক্ষকদের বদলির বিরুদ্ধেও সবর হয়েছে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ৷ সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, ‘‘চাল ও আলু দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের উপস্থিতির জন্য দুটি স্কুলের নিরপরাধ প্রধান শিক্ষককে শাস্তিমুলক বদলির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জানানো সত্ত্বেও কিছু বিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীরা চাল ও আলু নেওয়ার জন্য চলে আসে। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের হাতেই চাল ও আলু দিতে হয়। এর জন্য কোনভাবেই দায়ী করা যায় না শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষকদের। রাজ্য সরকার, শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা দপ্তরের কাছে দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক। না হলে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠবে৷’’