কলকাতা: করোনা সংক্রামণ রুখতে সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের গাফিলতির চিত্রটাও নজিরবিহীনভাবে উঠে আসছে। উপসর্গ থাকলেও রোগীকে আইশোলেশনে না রেখে জেনারেল ওয়ার্ডে রেখেই চিকিৎসার ঘটনা ঘটেছে। এরফলে পরে রিপোর্ট হাতে আসার পর পজিটিভ দেখা গেছে এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য কর্মী ও অন্যান্য রোগীদেরও বিপদে পড়তে হচ্ছে। এমনই ঘটনায় সাক্ষী থাকল আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা সংলগ্ন বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী মাড়োয়ারি হাসপাতাল।
৮৫ বছরের এক করোনা পজিটিভ বৃদ্ধার দেহ সৎকার হল ‘নন-কোভিড’ দেহ হিসেবে। ফলে কোয়রান্টিনে যেতে হল, মৃতার পরিবারের সদস্য সহ শ্মশানযাত্রীদেরও। একই সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হলো হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসক-সহ ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে। আনন্দবাজার ও জি ২৪ ঘণ্টা সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ৮৫ বছরের ওই বৃদ্ধা মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাসিন্দা। গত শনিবার একাধিক সমস্যা নিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা সংলগ্ন বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী মাড়োয়ারি হাসপাতাল ভর্তি করা হয় তাঁকে। এরপর দিন সকাল থেকেই তাঁর কাশি শুরু হয়, রাতের দিকে জ্বর আসে। করোনা-আক্রান্ত সন্দেহে বৃদ্ধার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেই রিপোর্ট হাতে আসার আগেই বৃদ্ধার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয় হাসপাতাল। নিমতলা শ্মশানে দেহ সৎকার করেন বৃদ্ধার দুই ছেলে। শ্মশানযাত্রায় সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন প্রতিবেশীও। এদিকে মঙ্গলবার রাতে বৃদ্ধার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর বুধবার সকালেই পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষার জন্য নিউ টাউনের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
করোনা আক্রান্তের দেহ সৎকারের জন্য আইসিএমআর-এর নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে যা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও অনুসরণ করছে। কিন্তু এরপরেও রিপোর্ট আসার আগেই কেন পরিবারের হাতে মৃতদেহ তুলে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের দাবি পরিবারের চাপে মৃতদেহ ছেড়ে দিতে হয়। পাল্টা মৃতার পরিবারের দাবি, তারা দেহ নিতে না চাইলেও চিকিৎসকের কথায় আশ্বস্ত হয়েই দেহ সৎকার করেন তাঁরা। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছিল হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধার। করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে নিয়মরক্ষার খাতিরে। দেহ নিলে কোনও সমস্যা হবেনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য পাল্টা দাবি, পরিজনদের চাপেই বৃদ্ধার দেহ ছেড়ে দেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে হাওড়া জেলা হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ সহ কলকাতা ও জেলাগুলির একাধিক সরকারি হাসপাতালে করোনা সংক্রামণের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বহু চিকিৎসক ও নার্সদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। -ফাইল ছবি