বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল, নেপথ্যে রাজনীতি? না অন্য বাস্তবতা?

বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল, নেপথ্যে রাজনীতি? না অন্য বাস্তবতা?

কলকাতা: লকডাউন পর্যবেক্ষণে রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল৷ ঘুরে বেড়াচ্ছেন দু’টি দলে ভাগ হয়ে৷ কেন্দ্রের নির্দেশ জারির পর থেকেই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে, এটা কতটা প্রশাসনিক, কতটা রাজনৈতিক?

প্রশ্নটা ওঠা স্বাভাবিক৷ কারণ, করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসে বিশ্বে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে৷ এমন মহামারী তো সম্প্রতি কালে দেখেনি কেউ৷ এই সময় সকলকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার কথা৷ এই সময় কোনও আন্তর্জাতিক সীমাও বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়৷ রাজনীতি তো পরের কথা৷  নাহলে মানব জাতিকেই যে এগিয়ে যেতে হেব বিনাশের পথে৷ সেটা কারও অজানা নয়৷ লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে পরিস্থিতি সেই রকমই ছিল ভারতেও৷ কেন্দ্র বা রাজ্যের মধ্যে কোনও তরজা ছিল না৷ মার্চ মাসের শেষের দিকে জনতা কার্ফুর ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ দেশের স্বার্থে কোনও বিরোধী দল এর বিরোধিতা করেনি৷ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দফায় লকডাউনে রাজনৈতিক কোনও বাধার মুখে পড়তে হয়নি কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রকে৷ কিন্তু সমস্যা শুরু হল দ্বিতীয় দফার লকডাউনে৷

দ্বিতীয় দফার লকডাউনে পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক খারাপ হতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাজ্যে৷ কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিল, যে রাজ্যের অবস্থা খারাপ, সেখানে প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে৷ প্রতিনিধি দল দেখবে, ওই সব রাজ্যে সঠিকভাবে লকডাউন মানা হচ্ছে কি না। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল অন্য জায়গায়৷ যে যে রাজ্য ঠিক করা হল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের জন্য তা প্রায় সব বিরোধীদের৷ এই সিদ্ধান্ত থেকেই সাধারণভাবে সন্দেহ দেখা দিতে লাগল, তবে কী কেন্দ্র এবার করোনা নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে৷ প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। এমনকী এ প্রশ্নও  উঠেছে যে, কখন সেই প্রতিনিধি দল আসবে তাও জানানো হয়নি রাজ্যকে। রাজ্য এসব জানার আগেই প্রতিনিধি দল এসে হাজির! 

দেশের বিভিন্ন রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে হিসেব সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়ে যাবে, এর পিছনে কোন ইঙ্গিত কাজ করছে৷ যে প্রশ্নটি ইতিমধ্যেই তুলে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েকটি রাজ্যের অবস্থা গুরুতর তা সকলের জানা৷ তার মধ্যে অন্যতম গুজরাত৷ গুজরাতে দুই হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ করোনায় ইতিমধ্যে ৯০ জন মারা গিয়েছেন৷ পরিযায়ী শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন৷ এই পরিস্থিতি কেন্দ্র গুজরাতে কোনও প্রতিনিধি দল পাঠায়নি৷ পাঠাল পশ্চিমবঙ্গে৷ পশ্চিবঙ্গ করোনা আক্রান্তের দিক থেকে ভারতবর্ষের ১৩ নম্বর স্থানে রয়েছে৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গে প্রতিনিধি দল পাঠানো হল। আবার উত্তরবঙ্গে যে তিনটি জেলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হচ্ছে, সেখানে গত ২১ দিনে কোনও করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধানই মেলেনি! প্রশ্ন উঠবে না!

২০২১ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন৷ সেই নির্বাচনের আগে করোনার ঝড়৷ যে ঝড় সামাল দিতে তৎপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাস্তায় নেমে কাজ করে চলেছেন। কখনও তিনি মাইক নিয়ে সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছে। কখনও আবার বাজারে গিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কৌশল শেখাচ্ছেন৷ দরিদ্র মানুষকে খাদ্য দিয়ে সাহায্য করা থেকে শুরু করে বিরোধীদের দাবি মেনে করোনা চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা-সবেতেই সম্মত হচ্ছেন সাধারণ মানুষের স্বার্থে৷ সব মিলিয়ে রাজ্যের সাধারণ মানুষের মন একপ্রকার জিতেই নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এ তো গেল সরকারের কাজ। তার বাইরেও তৃণমূলের প্রতিটি সংগঠনও নেমে পড়েছে রাস্তায়। ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। আর এই কঠিন সময়ে সে কাজেই পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি। বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয়রা মুখ্যমন্ত্রীকে যতটা আক্রমণ শানাচ্ছেন, ময়দানে তেমনটাদেখা যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই ভোটে তার ফসল তুলবেন মমতা। এ নিয়ে প্রশ্ন থাকে না। তাতেই চাপে পড়েছে বিজেপি। তৃণমূলের মতে, আসল কাজে এঁটে উঠতে না পেরে এবার কেন্দ্রের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টায় নেমেছে বিজেপি।

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কেরলেও একই অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্র৷ কেরল করোনা মোকাবিলায় একটা উদাহরণ হয়ে গিয়েছে দেশে বিদেশে৷ রাজ্যে করোনা আক্রান্ত কমতে শুরু করেছে৷ করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ হাসপাতালে আগে যথন জায়গা থাকত না, এখন তেমনি ফাঁকা পড়ে থাকে৷ করোনায় কেরলে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য কম৷ এই পরিস্থিতি আক্রান্তের সংখ্যাও কেরলে কমতে শুরু করেছে৷ অর্থনীতির কথা চিন্তা করে কেরল সরকার কিছু কিছু এলাকায় লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ কিন্তু কেরলের এইসিদ্ধান্ত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিত, যা কেন্দ্র পারেনি, কেরল তা পেরেছে৷ তাই কেরলের লকডাউনের শিথিলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্র৷ বাধ্য হয়েই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে কেরল সরে আসে৷ তাই কেন্দ্র যতই বলুক না কেন, করোনা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে না, এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলে দিল, করোনা নিয়েও এবার শুরু হয়ে গেল রাজনীতি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *