কলকাতা: এখনই উঠছে না লকডাউন৷ সোমবার নবান্নের বৈঠকে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ২১ মে পর্যন্ত লকডাউন থাকতে পারে ধরে নিয়েই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এদিন সকালেই প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে ভিডিও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তবে আজকে যে ন’টি রাজ্য কথা বলার সুযোগ পেয়েছিল তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের নাম ছিল না৷ তা সত্ত্বেও বলার সুযোগ পাওয়া যাবে ভেবে আমরা বৈঠকে অংশ নিয়েছিলাম৷ লকডাউন নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্র। রাজ্য নয়৷ তবে এদিন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর শরীরী ভাষায় লকডাউন বাড়বে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘‘ আমি আগেও বলেছিলাম ৪৯ দিন সাবধানে থাকতে হবে। সেই মতো ২১ মে পর্যন্ত সাবধানে চলতে হবে আমাদের৷”
পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা না করেই হঠাৎ হঠাৎ একটা করে নির্দেশিকা জারি করছে৷ কিন্তু নির্দেশিকা জারি করার আগে রাজ্যগুলির পরিস্থিতিও জানা দরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লকডাউন নিয়ে পরস্পর বিরোধী কথা বলছে কেন্দ্র৷ কেন্দ্রের কথায় স্বচ্ছতা নেই৷ ‘‘একদিকে বলা হচ্ছে কড়াভাবে লকডাউন মানতে হবে৷ অন্যদিকে বলছে সব দোকান খুলে দিতে হবে৷ আমরাও চাই সব দোকান খুলুক৷ কিন্তু দোকান খুললে তো রাস্তায় লোকজন বেরবেই৷ ভিড়ও বাড়বে৷ আমি তাঁদের কী ভাবে না করব? এভাবে চলচে পারে না৷ ঘরে হয় তালা দিতে হবে, না হয় চাবি খুলতে হবে৷’’ তিনি বলেন,‘‘ আমি মুখ্যসচিবকে বলেছি ক্যাবিনেট সচিবের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইতে। সেই ব্যখ্যা পাওয়া গেলে দোকান খোলার ব্যাপারে বুধবার আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব।”
রাজ্যে সংক্রমণের মাত্রা অনুসারে রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোন হিসাবে যে জায়গাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে তা প্রকাশ করা হবে। তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন জোনে কী ভাবে কাজ করা হবে৷ এই তালিকা প্রকাশিত হলে মানুষ নিজেরাও সচেতন হতে পারবে৷ তবে কোনও ভাবেই আন্তর্জাতিক বিমান, দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল চলবে না৷ তবে লকডাউন নিয়ে খানিক আক্রমনাত্মক সুরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘লকডাউনে মানুষ খাবে কী? লকডাউনে চা বাগান বন্ধ। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। সব কলকারখানা বন্ধ৷ রোজগারের জায়গা বন্ধ। কেন্দ্র তাহলে দায়িত্ব নিক। প্রত্যেকের ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে পাঠাক। তাতে মানুষ খেতে পাবে।”
কেন্দ্রের নির্দেশ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রের সমস্ত নির্দেশই মানব। কিন্তু তা যুক্তিযুক্ত হতে হবে, স্পষ্ট হতে হবে এবং স্বচ্ছতা থাকতে হবে সেই নির্দেশে।” এদিকে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজীব সিনহা জানান, পশ্চিমবঙ্গে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০৪৷ মৃত ২০৷ তবে কোরনা মুক্ত হয়েছেন ১০৯ জন৷ রাজ্যে সংক্রমণ মুক্তের ১৮ শতাংশ৷
তিনি আরও জানান, আমাদের রাজ্যে টোটাল টেস্টিং হয়েছে ১২,০৪৩৷ গত ২৪ ঘণ্টায় টেস্টিং হয়েছে ১১,০৫০ টি৷ এ রাজ্যে পজেটিভ কনফারমেশন রেট ৫.৪৷ সেখানে কেন্দ্রের পজেটিভ কনফারমেশন রেট ৫.২৫৷ এই মুহূর্তে রাজ্যের হাতে ৭,৯৬৯ টি আইসোলেশ বেড প্রস্তুত আছে৷ টেস্টিং ল্যাব রয়েছে ১৪টি৷ সারা দেশে কোভিড হাসপাতালের ৭.৫ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে আছে৷ অন্যদিকে, সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত ২.৩ শতাংশ৷ এখনও পর্যন্ত ৩.৪ কোটি বাড়িতে গিয়ে সার্ভে বা স্ক্রিনিং করা হয়েছে৷