চাইলেই বাড়িতে করোনা রোগী নয়, মানতে হবে সরকারি এই গাইডলাইন

চাইলেই বাড়িতে করোনা রোগী নয়, মানতে হবে সরকারি এই গাইডলাইন

কলকাতা: বাড়িতেই করোনার চিকিৎসা হতে পারে – এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিতর্কের মূল আধার, আম জনতার মনে নানান সন্দেহ। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি গাইডলাইন অনুযায়ী কোন কোন ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে বাড়িতে রেখে করোনা চিকিৎসা হতে পারে তা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। যে ব্যক্তির কোনও উপসর্গ নেই (asymptomatic) বা যে ব্যক্তির অতি অল্প উপসর্গ দেখা গিয়েছে (Mild or presymptomatic ), তাদের বাড়িতে বা হোম আইসলেশন থাকতে দেবে রাজ্য সরকার।

তবে, বিষয়টি এতটাও সহজ নয়। করোনা রোগীর হোম আইসলেশনের জন্য রয়েছে কিছু বিশেষ নিয়মাবলী। ২৮ এপ্রিল রাজ্য স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বিবেক কুমার নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের গাইডলাইন অনুযায়ী, অল্প থেকে অতি অল্প উপসর্গ (Mild or presymptomatic ) যাদের দেখা গিয়েছে, তারা হোম আইসলেশন থাকতে পারে। সন্দেহজনক যে রোগীর করোনা পরীক্ষার ফল এখনও আসেনি, তিনিও হোম আইসলেশনে থাকতে পারেন। তবে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, হোম আইসলেশন তখনই সম্ভব, যখন সেই ব্যাক্তির বাড়িতে যথোচিত ব্যবস্থা থাকবে। নয়ত নয়।

মন্ত্রকের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, Containment phase চলাকালীন অবস্থায় রোগীদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে — very mild/mild, moderate and severe । very mild/mild রোগীদের জন্য যথাক্রমে কোভিড কেয়ার সেন্টার, moderate রোগীদের জন্য কোভিড হেলথ সেন্টার এবং severe রোগীদের জন্য কোভিড হাসপাতালের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু, উল্লেখযোগ্যভাবে সেখানে এ ও বলা রয়েছে, বাড়িতে নিজেকর আইসলেশন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকলে mild/presymptomatic রোগীদের হোম আইসলেশন করা যেতে পারে।

দেখে নেওয়া যাক কী কী প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পূর্ণ হলে তবেই একজন অল্প থেকে অতি অল্প উপসর্গ (Mild or presymptomatic ) ব্যক্তিকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে রাজ্য সরকার।

১. ওই ব্যক্তির অল্প থেকে অতি অল্প উপসর্গ (Mild or presymptomatic ) রয়েছে, তা জানাতে হবে চিকিৎসককে। কোনও রোগী নিজে থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সেটা অবাস্তব।
২. ওই বাড়িতে self isolation এর যথোচিত প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা থাকবে। তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও কোয়ারেন্টিন করার সুযোগ থাকবে।
৩. সব সময়ের (২৪x৭) জন্য ওই রোগীর কাছে একজন care giver বা শুশ্রূষাকারী থাকবেন। যতদিন ওই রোগী বাড়িতে থাকবেন, তাঁর সঙ্গে হাসপাতালের নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে।
৪. নিয়ম অনুযায়ী, রোগীকে চিকিৎসারত চিকিৎসক ওই care giver এবং রোগীর নিকটবর্তী সকল ব্যক্তির জন্য 'হাইড্রোকস্কিক্লোরোকুইন প্রোফাইলাক্সিস' প্রেসক্রিপশনে লিখে দেবেন। সেই ওষুধ খেতে হবে।
৫. মোবাইলে আরোগ্য সেতু app ডাউনলোড করে রাখতে হবে। সব সময় ওই App সচল রাখতে হবে।
৬. রোগীকে তাঁর স্বাস্থ্যের বিষয়ে district surveillance officer কে জানাতে হবে।
৭. রোগীকে self isolation এর জন্য মুচলেকা দিতে হবে। ফরম ভরতে হবে।

তবে এখানেই শেষ নয়, রোগী এবং তার care giver যদি দেখেন, ওই রোগীর শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, ঘুম থেকে উঠতে অসুবিধা, মানসিক অস্থিরতা, ঠোঁট অবকনগ মুখে নীলাভ ভাব হয়েছে তবে চিকিৎসকের সঙ্গে সত্বর যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়াও, care giver এবং রোগীদের জন্য কিচজ আলাদা নির্দেশও রয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, হোম আইসলেশনের জন্য বাড়িতে কী কী থাকা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা যা ধারণা করছেন তা হল, বাড়িতে রোগীর ঘর আলাদা হতে হবে। ঘরেই পাশেই বাথরুম থাকতে হবে। বাড়ির অন্যান সদস্যরা আলাদাভাবে অন্য ঘরে থাকবেন। সেই ক্ষেত্রে তা সম্ভব হতে পারে। তবে, অবশ্যই বাকি শর্তগুলিও ১০০ শতাংশ সম্পুর্ন হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − 3 =