ইন্টারনেট, অ্যানড্রয়েড ফোন না থাকলে মিলবে ‘প্রচেষ্টা’র ১ হাজার টাকার অনুদান?

ইন্টারনেট, অ্যানড্রয়েড ফোন না থাকলে মিলবে ‘প্রচেষ্টা’র ১ হাজার টাকার অনুদান?

ec3d1b330042b678b81623e2c5142759

কলকাতা:  ‘প্রচেষ্টা’র আলো আধাঁরিতে দিশা পেতে নাকাল রাজ্যের মানুষ৷ ‘প্রচেষ্টা’য় নাম নথিভুক্ত করতে ঘাম ঝরানো দুপুরেও দেখা গিয়েছিল জেলা শাসক, কমিশনার, এসডিও বা বিডিও অফিসের সামনে লম্বা লাইন৷ সরকারি ফর্মে ছবি সেঁটে, নামধাম লিখে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ৷ কিন্তু তাঁদের সেই প্রচেষ্টা আপাতত ব্যর্থ৷ এখন অ্যাপের গেরোয় ফেঁসেছেন তাঁরা৷ যার জেরে প্রচেষ্টা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন ধন্দ৷ যাঁরা হাজার টাকার জন্য সরকারের দ্বারস্থ, তাঁদের কাছে অ্যানড্রয়েড ফোন কি বিলাসিতা নয়? ফোন যদি থেকেও থাকে, ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য টাকা আসবে কোথা থেকে? যাঁদের দু’বেলা খাবার জুটছে না তাঁদের কাছে অ্যানড্রয়েড ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ করে ‘প্রচেষ্টা’ অ্যাপ ডাউনলোড করা কি আদৌও সম্ভব? উঠছে প্রশ্ন৷

লকডাউনে ব্যাহত স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ৷ ছেদ পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের রুজিরুটিতে৷ এই পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেই ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গত ১০ এপ্রিল এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার৷ ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এই প্রকল্পে এককালীন হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়৷ সেই মতো এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই শুরু হয় ‘প্রচেষ্টা’য় নাম লেখানোর হিড়িক৷ প্রতিটি জেলায় জেলা শাসক, কমিশনার, বিডিও এবং সাব ডিভিশনাল অফিসের সামনে শুরু লম্বা লাইন৷ যা দেখে প্রশাসনের মাথায় হাত৷ ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের ফর্ম জমা নেওয়া শুরু হতেই সামাজিক দূরত্ব রক্ষার সরকারি নির্দেশ কার্যত শিকেয় ওঠে।

এই খবর আসতেই নবান্ন থেকে রাজ্যের সমস্ত জেলার জেলাশাসককে সেই সময় এই প্রকল্পের ফর্ম জমা নেওয়া স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। জারি হয় নয়া নির্দেশিকা৷ বলা হয়, অফলাইন নয়, মোবাইল ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করে নাম লেখাতে হবে ‘প্রচেষ্টা’য়৷ ৪ মে থেকে প্লে স্টোরে মিলবে এই অ্যাপ৷ এছাড়াও https://prachestawb.in website থেকেও অ্যাপস ডাউনলোড করে আবেদন করা যাবে৷ কিন্তু সোমবার কার্যত অ্যানড্রয়েড ফোনে নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউলোড করা যায়নি৷ অধিকাংশ মানুষের প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়৷

কিন্তু এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, যে অসংগঠিত ক্ষেত্রের দিনমজুরদের জন্য এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে, তাঁদের সকলের কাছে কি অ্যানড্রয়েড ফোন আছে? তাঁরা কী ভাবে এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন? নাকি হাজার টাকা পেতে এই দুর্দিনে তাঁদের জোগার করতে হবে অ্যানড্রয়েড ফোন? লকডউনে বন্ধ রয়েছে ক্যাফের দরজাও৷ এই পরিস্থিতিতে সরকারের এই গরিমশিতে কার্যত যাঁতাকলে শ্রমিকশ্রেণি৷ হাজার টাকার আশীর্বাদ পেতে হাজার রকম ফিরিস্তি পোহাতে হচ্ছে তাঁদের৷ একবার রোদে তেতেপুড়ে ফর্ম জমা দিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল কিছু গরিব মানুষ৷ তাঁদের সামনে নতুন করে হাজির আরও এক কঠিন পরীক্ষা৷

যাঁরা সামাজিক সুরক্ষা যোজনার সুযোগ-সুবিধা বা সামাজিক পেনশন পান না, সেই সকল অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্যই ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাথাপিছু এককালীন এক হাজার টাকা দেওয়া হবে৷ তবে আবেদনকারীকে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে হবে হবে৷ আবেদনকারী MGNREGA (১০০ দিনের কাজ)-তে নথিভুক্ত হয়ে থাকলে বা কৃষি কাজে যুক্ত থাকলে এই প্রকল্পের জন্য গ্রাহ্য হবেন না।

সোমবার থেকে ‘প্রচেষ্টা’ অ্যাপের মাধ্যমে ফর্ম জমা দিতে পারার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেল সোমবার কোনওভাবেই কাজ করল না অ্যাপ৷ মঙ্গলবার সকাল থেকেও চেষ্টা করে খোলা যায়নি ‘প্রচেষ্টা’ অ্যাপ৷ চন্দননগরের বাসিন্দা প্রভাকর দত্ত বলেন, বাড়ির পরিচারিকার জন্য বহুবার এই অ্যাপ ডাউনলোডের চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু ডাউনলোড করা যায়নি৷ বারবার an error দেখাচ্ছে৷ অনেকে আবার বলছেন, প্লে স্টোরে খুঁজেই পাননি এই অ্যাপ৷ চুঁচুড়ার বাসিন্দা দিলীপ দত্তের করুণ প্রশ্ন, ‘‘আমাদের কাছে তো স্মার্টফোনই নেই৷ তাহলে কি আমরা টাকা পাব না?’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *