এবার রাজ্যের করোনা মৃত্যুর ‘কোমরবিডিটি’ তত্ত্বে কেন্দ্রের স্বীকৃতি! তুঙ্গে রাজ-চর্চা

এবার রাজ্যের করোনা মৃত্যুর ‘কোমরবিডিটি’ তত্ত্বে কেন্দ্রের স্বীকৃতি! তুঙ্গে রাজ-চর্চা

কলকাতা: এবার রাজ্যের দেখানো পথে গোটা দেশজুড়ে করোনা মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রকাশ করল খোদ কেন্দ্রীয় সরকার স্বাস্থ্যমন্ত্রক৷ এতদিন রাজ্যের তরফের ঠিক যে তত্ত্বের ভিত্তিতে মৃত্যুর তথ্য প্রকাশে আনা হতো, এবার ঠিক সেই তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশজুড়ে করোনা তথ্য প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ কেন্দ্র ও রাজ্যের কোমরবিডিটি তত্ত্ব ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর৷

পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কত? এই নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে বিস্তর ফারাক ঘিরে গোটা কম বিতর্ক তৈরি হয়নি৷ রাজ্যের করোনা মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোমরবিডিটি তথ্য প্রকাশ করা হতো এতদিন৷ রাজ্যের সেই তত্ত্বকে এবার কার্যত সায় দিয়ে এবার নয়া পরিসংখ্যান প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক৷

সোমবার ও মঙ্গলবার রাজ্য ও কেন্দ্রের তরফে যে করোনা মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, তাতে কোমরবিডিটি তত্ত্বে উল্লেখ করা হয়েছে৷ সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলায় করোনা মৃত্যু সংখ্যা ৬১ জন৷ কিন্তু, মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য দেখানো হয়, রাজ্য করোনা মৃত্যুর সংখ্যা ১৩৩ জন৷ মঙ্গলবার বিকেলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যের পরিসংখ্যানে বিস্তর ফারাক দেখা গেলেও নতুন করে বিতর্ক তৈরি হলেও কোমরবিডিটি তত্ত্বেও এক কেন্দ্র-রাজ্য৷

কেন্দ্রের পরিসংখ্যান

য়েকদিন আগেই রাজ্যের মুখ্যসচিব করোনায় মৃত এবং করোনা পজেটিভ কিন্তু অন্য অসুখে মৃতের সংখ্যা আলাদাভাবে প্রকাশ করেন৷ সে ক্ষেত্রে রাজ্যের তরফে কোমরবিডিটি শব্দটি সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হলেও মৃত্যুর কারণ অন্য অসুখ৷ যদিও এই শব্দটিকে কেন্দ্র করে বিজেপির তরফ এতদিন রাজ্যের বিরুদ্ধে করোনা তথ্য গোপনের বিস্তর অভিযোগ তোলা হচ্ছিল৷ অস্বস্তি বাড়িয়ে বিজেপি যখন রাজ্যের বিরুদ্ধে করোনা তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলছে ঠিক তখনই মঙ্গলবার রাজ্যের দেখানো পথে কোমরবিডিটি তত্ত্বে সহ করোনায় মৃতের পরীসংখ্যান তুলে ধরল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক৷ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে মৃতের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ৭০ শতাংশের বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে কোমরবিডিটি কারণে৷ কিন্তু সোমবার পর্যন্ত কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে এই শব্দটি উল্লেখ আগে কখনও করা হয়নি৷ আর এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক৷ 

রাজ্যের পরিসংখ্যান

সিপিএমের তরফে দাবি করা হয়েছে, করোনা নিয়ে তথ্য গোপনের প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি সরকার৷ এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ী জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের মৃত্যুমুখে যাওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি৷ তাতে করোনা সংক্রমণের তথ্য কি পাল্টে যেতে পারে? তাহলে এই কোমরবিডিটি তত্ত্ব হঠাৎ কেন আমদানি করল কেন্দ্র সরকার? এটা কি দিদির কাছ থেকে দাদা শিখল? যাতে গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যায়? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র জানিয়েছেন, করোনা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়ে চলেছে৷ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে দুই সরকারের উচিত পদত্যাগ করা৷

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেন জানিয়েছেন, কেন্দ্র সরকার এখন বলছে ৭০% মৃত্যু কোমরবিডিটির জন্য৷ তারমানে বাংলা যেটা আগে বলতো, সবাই নিন্দা করতো, এখন বাংলার এই পদ্ধতিটা সারা ভারত বর্ষ মেনে নিয়েছে৷ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে৷ তাহলে এখন কেন্দ্র বলুক বাংলায় সঠিক পথ দেখিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 4 =