কলকাতা: দীর্ঘ লকডাউনে বেহাল দেশের অর্থনীতি৷ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বহু মানুষ৷ এই অবস্থায় অর্থনীতিকে কিছুটা সচল করতে গ্রিন এবং অরেঞ্জ জোনে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ অনেক জায়গায় ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পায়নি শপিং মলগুলি৷ দীর্ঘ লকডাউনে রাজ্যের শপিং মলগুলি বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে৷ শীঘ্রই শপিং মল খোলার অনুমতি দেওয়া না হলে, কাজ হারাতে পারেন প্রায় ৫০ হাজার কর্মী৷ তাই সুরাহা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন শপিং মলের কর্তারা৷
দেড় মাসের উপর বন্ধ পড়ে থাকা মলগুলির দোকান মালিকরাও ভাড়া দেওয়া বন্ধ করেছেন৷ এমনকি কমন এরিয়ার মেইন্টেন্যান্স চার্জও শপিং মলের মালিকরা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মার্লিন গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা অ্যাক্রোপলিস মলের কর্ণধার সুশীল মোহতা৷ এদিকে মাথায় রয়েছে বিপুল পরিমাণ লোনের বোঝা৷ আপাতত তিন মাসের মোরাটোরিয়ামে ব্যাংক ইএমআই কাটা বন্ধ রাখলেও, তিন মাস পরে তা সুদ সহ জমা দিতে হবে৷ তিনি বলেন, দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও, সঙ্গে সঙ্গেই মালিকরা ভাড়া দিতে শুরু করবেন, এমন আশা করাও অন্যায়। কারণ এতদিন ধরে তাঁদেরও বিক্রিবাটা বন্ধ৷
এক প্রকার দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে রাজ্যের শপিং মল মালিকদের৷ বাধ্য হয়েই তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে বিদ্যুতের ফিক্সড ডিমান্ড, কর্পোরেশন ট্যাক্স সমেত একাধিক ক্ষেত্রে সাময়িক ছাড় দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন৷ করোনা পরিস্থিতিতে শপিং মল খোলার আগে এবং পরে কী ধরনের বিধিনিষেধ মানা হবে, সে বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরি করেছে শপিং মলগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন শপিং সেন্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এসসিএআই)। রাজ্য সরকারের কাছে ওই এসওপি জমা দেওয়া হয়েছে।
সুশীলবাবু বলেন, ‘‘শপিং মলের ভিতরে থাকা দোকানগুলির আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া অনেক বেশি স্বচ্ছ। শপিং মল খুললে রাজ্য সরকারও জিএসটি পাবে। লাভ হবে রাজ্য কোষাগারে৷’ অন্যদিকে, ফোরাম মলের নির্মাতা সংস্থা ফোরাম প্রোজেক্টস-এর কর্ণধার রাহুল সরাফ বলেন, গড়িয়াহাট মার্কেট বা নিউ মার্কেট খোলার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের যে সমস্য হতে পারে, শপিং মলের ক্ষেত্রে তা হবে না। এখানকার কর্মীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং শপিং মলগুলিতে অনেক বেশি সংগঠিত ভাবে কাজ হয়৷ এখানে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কাজ করতেও সমস্যা হবে না৷
শপিং মলগুলিতে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার পণ্য অবিক্রিত পড়ে রয়েছে। বিক্রি বন্ধ হওয়ায় মোটা টাকার মূলধন আটকে রয়েছে। আর দোকান বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েছেন মল মালিকরা৷ রাহুল সরাফ জানান, এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে স্টোর ম্যানেজার থেকে শুরু করে জুনিয়ার অফিসার, সেলস বয়/গার্ল, সিকিওরিটি, সুপারভাইজার প্রতিটি কর্মীকে মার্চ পর্যন্ত বেতন দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু লকডাউন আরও দীর্ঘায়িত হলে তাঁরা আর বেতন পাবেন কি না, সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ এর ফলে প্রায় ৫০ হাজার কর্মীর চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এই কর্মীদের একটা বড় অংশই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী৷
তাঁর অনুযোগ, ‘মদের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ কর্মীদের৷ মলগুলি এসওপি মেনে চলছে কি না, তা দেখার জন্য মল পিছু ৫-৬ জন পুলিশ নিয়োগ করা হলে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হতো৷