কলকাতা: আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়তে চলেছে বঙ্গোপসাগরে ঘণীভূত অতি শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড় উমপুন৷ বুধবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়ার মাঝখান দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। ২০০৪ সালে এই ঝড়ের নাম রাখে তাইল্যান্ড৷ বলা হচ্ছে, বুলবুল এবং আয়লার থেকে অনেক বেশি বিপজ্জনক হতে চলেছে উমপুন বা আমপান৷
অতীতে অবশ্য ঝড়ের নামকরণ করা হত না। পরে দেখা যায় যে, ঝড়ের বিশেষ নামকরণ করলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কার্যকরী করতে সুবিধা হয়৷ নামের মাধ্যমে ঝড়টিকে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। সাইক্লোনের নাম শুধু ভারতের আবহাওয়া দফতর ঠিক করে না। ৮টি দেশের আবহাওয়া দফতরের ভাবনা-চিন্তা থেকে দেওয়া হয় ঝড়ের নাম।
কিন্তু এত আগে কী ভাবে দেওয়া হল এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম? কী ভাবেই বা ঝড়ের নামকরণ করা হয়?
ঝড়ের নামকরণের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা৷ কমিটির সদস্য দেশগুলি ঝড়ের বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করে থাকে৷ নামের তালিকা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ওই অঞ্চলে ঝড়গুলির নামকরণ হয়৷ বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঝড়গুলির নাম ঠিক করে এই অঞ্চলের সদস্য দেশ অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মলদ্বীপ, তাইল্যান্ড এবং ওমান৷ ২০০৪ সালে ৮টি ঘূর্ণিঝড়ের নামের জন্য ৬৪টি নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল৷ পূর্ব নির্ধারিত তালিকায় শেষ নাম উমপুন। আর ২০২০-তে এটাই প্রথম ঝড়। এই তালিকায় ছিল ফণী, মহা-র মতো ঝড়ের নামও।
ভবিষ্যতে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হবে ১৬৯ নামের তালিকা থেকে। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঝড়গুলি নির্দিষ্ট তীব্রতায় পৌঁছলে এগুলির নামকরণের ভার রয়েছে আরএসএমসি নয়াদিল্লি ট্রপিক্যাল সেন্টারের হাতে।
২০০৮ সালে যে ঘূর্ণঝড় হয় তার নাম ছিল নার্গিস৷ এই নাম রেখেছিল মলদ্বীপ৷ ২০০৯ সালে হয় আয়লা৷ এই ঘূর্ণিঝড়টিরও নাম দিয়েছিল মলদ্বীপ৷ ২০১০ সালে ঘূর্ণিঝড় লায়লার নামকরণ করেছিল পাকিস্তান৷ ২০১৩ সালে ফাইলিন ঘূর্ণিঝড়ের নাম রেখেছিল তাইল্যান্ড৷ ২০১৪ সালে ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের নাম রেখেছিল ওমান৷ ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ফনী’র নামকরণ করেছিল বাংলাদেশ৷ ২০১৯ সালেরই শেষ দিকে হয় বুলবুল৷ নাম রেখেছিল পাকিস্তান৷ এবার ধেয়ে আসছে তালিকায় থাকা শেষ নাম উমপুন৷ যা আগের ঝড়গুলির থেকে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ও শক্তিশালী হতে চলেছে৷
ভয়ঙ্করতার দিক থেকে ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড়টাই এখনও পর্যন্ত সবথেকে বেশি স্মরণীয় হয়ে রয়েছে৷ পারাদ্বীর সুপার সাইক্লোনের থেকেও শক্তিশালী হতে চলেছে আমপান বা উমপুন৷ ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম তালিকা শেষ হওয়ার পর আরও একটি নতুন তালিকা তৈরি করা হয়েছে৷ নয়া তালিকায় ১৩টি দেশ মিলে ১৬৯টি নাম প্রস্তাব করেছে৷ উমপুনের পর যে ঘূর্ণঝড়গুলি হবে তার নাম যথাক্রমে নিসর্গ, গতি, নীবর, শাহিন, গুলাব, তেজ, আগ৷ ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে শুধু মহিলাদের নাম ব্যবহার নিয়ে সমালোচনার পর এখন পুরুষ নামও এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।