করোনা ঠেকাতে ব্যর্থ হলে সরকার ভেঙে দিন, অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রীর

করোনা ঠেকাতে ব্যর্থ হলে সরকার ভেঙে দিন, অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা: বুধবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে করোনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, পরিযায়ী শ্রমিক-সহ ভিন রাজ্য থেকে বহু মানুষ এ রাজ্যে ঢুকছেন, যাঁদের অনেকেই সংক্রমিত। মহারাষ্ট্র, চেন্নাই, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাতের মতো হটস্পটগুলি থেকে লোক আসছে বাংলায়৷ যার ফলে এ রাজ্যের করোনা-পরিস্থিতি ফের খারাপ হতে পারে। তাঁর মতে, রাজ্যের সঙ্গে পরিকল্পনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ৷  রাজ্যের সামনে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ রাজ্য সরকারের তরফে ২২৫টি ট্রেনের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছিল রেলকে৷ কোন কোন দিন, কোন কোন ট্রেন আসবে, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ কিন্তু রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলেই মুম্বই থেকে একসঙ্গে ৩৬টি ট্রেন চালানো হচ্ছে খবর পেলাম৷ মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা জানতে পারলাম, তারাও এই বিষয়ে কিছু জানত না৷ আমাদের সঙ্গে কথা বলে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারত কেন্দ্র৷ এত লোককে একসঙ্গে কী ভাবে পরীক্ষা করব? রাজ্যে সংক্রমণ বাড়লে তার দায় কে নেবে? 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা একসময় নিয়ন্ত্রণে এসেছিল৷ কিন্তু এত লোক বাইরে থেকে আসছে৷ তাঁদের মধ্যে ২৫ শতাংশ মানুষের পজেটিভ হলেই রাজ্যের জন্য তা বড়  দুঃসংবাদ হবে৷ প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলব, সংক্রমণ ঠেকাতে তাঁরা যেন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন৷ সংক্রমণের দায় কে নেবে? কোনও দায়িত্ব নেই রেল মন্ত্রকের৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁরা বাইরে থেকে আসছেন, তাঁদের সকলকে ইন্সটিটিউশনাল কোয়েরেন্টিনে রাখা সম্ভব নয়৷ ইতিমধ্যে ৫-৬ লক্ষ লোক এসে গিয়েছে৷ তবে এর জন্য জেলায় জেলায় টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে৷ এই টাস্ক ফোর্সে থাকবেন বিডিও, পুলিশের আইসি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান, পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদের সদস্য এবং বিধায়করা৷ 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাঁচটি হটস্পট রাজ্য মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, দিল্লি এবং তামিলনাড়ু থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের ইন্সটিটিউশনাল কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে৷ এর জন্য স্কুলগুলিতে কোয়ারেন্টিন সেন্টার করতে হবে৷ তাঁদের জন্য বাড়ির লোক খাবার দিতে চাইলে অনুমতি দেওয়া হবে৷ প্রতিদিন নজরদারি চালাতে হবে৷ ১৪ দিন থাকার পর তাঁদের টেস্ট করা হবে৷ রিপোর্ট নেগেটিভ হলে বাড়ি পাঠানো হবে পরিযায়ীদের৷ তবে পজেটিভ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য দফতর৷ এই পাঁচ রাজ্য ছাড়া অন্য রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের মধ্যে করোনার লক্ষণ না থাকলে তাঁদের বাড়ি পাঠানো হবে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তবে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক৷ ‘সন্ধানে অ্যাপে’র মধ্যে দিয়ে মনিটারিং করবে টাস্ক ফোর্স৷ 

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, বাইরে থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই পজেটিভ হয়েছেন৷ তিনি বলেন, রাজ্য শ্রমিকদের ভাড়ার টাকা দিচ্ছে৷ তা সত্ত্বেও ট্রেনে গাদাগাদি করে লোক আসছে৷ সোশ্যাল ডিস্টেনসিং মানা হচ্ছে না৷ মুম্বই থেকে সরিয়ে বাংলায় পাঠানো হচ্ছে৷ এতে দেশে কনটেনমেন্ট জোন আরও বাড়ছে৷ আমাদের মনে রাখা উচিত দেশ কিন্তু একটাই৷ কনটেনমেন্ট এলাকাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ না রাখলে গোটা দেশটা লাল হয়ে যাবে৷মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলার ক্ষতি করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও বলেছিলাম, এরকম চলতে থাকলে সরকার ভেঙে দিন৷ আপনাদের যদি মনে হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার করোনা মোকাবিলা করতে পারছে না, তাহলে আপনারা দায়িত্ব নিন৷ এতে আমার কোনও আপত্তি নেই৷ উনি অবশ্য বলেছিলেন, নির্বাচিত সরকার কী ভাবে ভাঙব?’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *