করোনা-উম্পুনের দাপটে ফিঁকে এবারের জামাইষষ্ঠীর জামাই-আদর

করোনা-উম্পুনের দাপটে ফিঁকে এবারের জামাইষষ্ঠীর জামাই-আদর

কলকাতা: বাঙালি সংস্কৃতিতে জামাইষষ্ঠী মানেই বেশ একটা জম্পেশ ব্যাপার৷ এই দিন পঞ্চব্যাঞ্জনে চলে শাশুড়ি মায়ের জামাই আদর৷ কিন্তু চলতি বছর সেই আদর থেকে বঞ্চিত হবেন অধিকাংশ জামাই-ই৷ একে করোনা পরিস্থিতির জেরে লকডাউন, সঙ্গে দোসর প্রাকৃতিক দুর্যোগ৷ 

গত সপ্তাহে সুপার সাইক্লোন উম্পুনের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল৷ তার উপর গতকাল থেকে বেশকিছু জেলায় ফের শুরু হয়েছে ঝড়-বৃষ্টি৷ সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার৷ অন্যদিকে বন্ধ ট্রেন৷ রাস্তায় বাস-ট্যাক্সিও হাতে গোনা৷ করোনা, লকডাউন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ত্রিফলায় বিদ্ধ বাঙালির জামাইষষ্ঠী৷ তাই এই বছর জামাইষষ্ঠী থেকে বঞ্চিত নতুন জামাইরাও৷ 

চলতি বছর করোনার ধাক্কায় অনেক অনুষ্ঠানই ঠাঁই পেয়েছে অনলাইনে৷ কিন্তু ভিডিও কলে জামাইষষ্ঠী? তা নেহাতই কল্পনা৷ তবে যে সকল জায়গায় পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক রয়েছে, সেখানে অল্প-স্বল্প হলেও চলবে জামাই বরণ৷ তবে শ্বশুরবাড়ি বা জামাইয়ের বাড়ি কনটেনমেন্ট জোনে হলে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই৷ ‘এ’ জোন হলে তো ঢোকাই যাবে না৷ ‘বি’ জোনেও থাকবে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ৷ তবে ‘সি’ হলে একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট৷ এত বিধি নিষেধ পেরিয়ে কী ভাবে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছবেন জামাইরা৷ তাই এ বছরের জন্য বেশিরভাগ জামাইয়ের জন্যই তোলাই রইল জামাইষষ্ঠী৷ 

কিন্তু কেন পালন করা হয় জামাইষষ্ঠী? জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল ষষ্ঠীর দিন মেয়ে জামাইয়ের মঙ্গল কামলায় পালন করা হয় জামাইষষ্ঠী৷  এই দিন মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে তাঁদের সমাদর করা হয়। সঙ্গে মা ষষ্ঠীর পুজো করেন শাশুড়িরা৷ যাতে মেয়ে-জামাই শীঘ্রই সন্তানের মুখ দেখতে পান। 

আজও বেশ কিছু বনেদি পরিবারে অতীতের রীতি মেনে হয় জামাইষষ্ঠী। তবে, আজকাল কিছুটা বদলেছে শহুরে  জামাইষষ্ঠীর ধরন৷ শুরু হয়েছে নামীদামী হোটেল বা রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনানোর রীতি৷ তবে এখনও শাশুড়িমায়ের হাতের হরেক পদই জামাইদের অধিক প্রিয়৷ বাড়ি বড়ি থাকে এলাহি আয়োজন৷ 

কিন্তু এই বছর পুরোটাই যেন আলাদা৷ করোনা তো ছিলই, তার উপর উম্পুনের জেরে বাংলার বাজারে আগুন৷ সবজি থেকে মাছ-মাংস, সব কিছুর দামই আকাশ ছোঁয়া৷ ইলিশ, চিংড়ি, পাবদা, ভেটকি-তে হাত দেওয়াই দায়৷ দাম বেড়েছে ফলেরও৷ তাই জামাইষষ্ঠী হলেও অনেক জামাইয়ের পাতেই হয়তো থাকবে না আম, কাঁঠাল, লিচু সহ হরেক ফলের সম্ভার৷ কাটছাঁট হবে মেনুতেও৷ আবার অনেক জামাই বলছেন, বিপর্যয় কাটুক, সব স্বাভাবিক হোক, সেই সব দিনের জন্য তোলা থাক সব  আনন্দ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *