কলকাতা: করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশ জুড়ে চলা চতুর্থ দফার লকডাউন শেষ হচ্ছে রবিবার৷ তার পরে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না তা নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালাচ্ছে কেন্দ্র৷ এরই মধ্যে শুক্রবার রাজ্য থেকে কার্যত লকডাউন উঠে যাচ্ছে বাংলায়! মুখ্যমন্ত্রী মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়া ঘোষণা ঘিরে বাড়ছে জল্পনা৷ অর্তনীতিকে সচল করার যুক্তিতে লকডাউনের তৃতীয় এবং চতুর্থ দফায় বেশ কিছু ক্ষেত্রকে ধাপে ধাপে সচল করে দেওয়া হয়েছে৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জুনের প্রথম সপ্তাহ পার স্কুল-কলেজ বাদে রাজ্যে প্রায় সব কিছুই চালু করে দেওয়া হচ্ছে৷ খুলে যাবে মন্দির, মসজিদ সহ সমস্ত ধর্মস্থান, পুরোদমে চালু হয়ে যাবে সরকারি বেসরকারি অফিস, দোকান বাজার৷ বাসে এতদিন ২০ জন যাত্রীর বেশি বহন করা যাবে না বলে যে নীতি চালু করা হয়েছিল, তাও শিথিল করে বাসে ‘যত সিট তত যাত্রী’ নীতি নেওয়া হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরণের বাসের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে৷ এমনিতেই লকডাউনের চতুর্থ দফায় কেন্দ্রের নাইট কারফিউ জারি করার প্রস্তাব মানেনি রাজ্য৷ লকডাউনের ভবিষ্যৎ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকাররের অবস্থান জানার আগেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও ছাড় দেওয়ার যে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, তাঁকে লকডাউন তুলে দেওয়ারই নামান্তর বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল! করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ যেখানে অন্য রাজ্যকে পিছনে ফেলে ক্রমাগত উপরে উঠে আসছে সেখানে, অপরিকল্পিত ভবে লকডাউন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হতে পারে বলে মনে করছে পর্যরেক্ষক মহলের একাংশ৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন অবশ্য রাজ্যবাসীকে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলারই পরামর্শ দিয়েছেন৷
নবান্নে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনা ও আম্ফান পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এর পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন , ‘‘করোনা এখন আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে। ভালো থাকতে গেলে জীবন যাপনের পদ্ধতিকে অনেকটাই পাল্টাতে হবে। যেহেতু ছোঁয়া থেকে রোগ ছড়ায় তাই সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। দ্রুত করোনা ছড়াচ্ছে তাই ব্যক্তিগত সুরক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পড়তেই হবে। স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব রাখতেই হবে। এবার আস্তে আস্তে সব খুলে যাবে।’’ সাবধানতা বজায় রেখেই আগামী পয়লা জুন থেকে চা শিল্প এবং পাট শিল্পে একশ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ শুরু হবে। ৮ জুন থেকে সরকারি এবং বেসরকারি দপ্তরগুলি একশ শতাংশ কর্মী নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন৷ তবে স্কুল-কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুর জুন মাস বন্ধ থাকবে৷ পাশাপাশি পয়লা জুন থেকে রাজ্যের ধর্মস্থান গুলিকে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান৷ এদিন মমতা বলেন, রেলমন্ত্রক ট্রেনের ১ জন আসনে ৩-৪ জন করে লোক পাঠাচ্ছে৷ তাহলে আর মন্দির, মসজিদ কী দোষ করল? তাই ১ জুন বেলা ১০টা থেকে খুলে যাবে সব ধর্মস্থান৷
ধর্মস্থান খোলার ক্ষেত্রে নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন মমতা৷ তিনি বলেন, ধর্মস্থানে একবারে ১০ জনের বেশি ঢোকা যাবে না৷ কোনও আবস্থাতেই ধর্মস্থানে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। মানুষ ধর্মস্থানে ঢুকে পুজো দেবেন, প্রার্থনা করবেন, বেরিয়ে আসবেন। ধর্ম স্থানগুলিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্যানিটাইজার এর মত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করার বিষয়টির ওপর সংশ্লিষ্ট পরিচালন কমিটিকে নজরদারি চালাতে হবে। নিয়ম না মানা হলে ওইসব ধর্ম স্থান বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি হুশিয়ারি দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে মন্দির মসজিদ গুরুদুয়ারার মত ধর্মস্থান বন্ধ থাকলেও পরিযায়ী শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব বিধির তোয়াক্কা না করে ট্রেনে চাপিয়ে রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ প্রয়োজনে ট্রেনগুলিতে বগির সংখ্যা বাড়িয়ে শ্রমিকদের আরো সুরক্ষিতভাবে রাজ্যে পাঠানোর ওপরে মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়েছেন৷ রাজ্য সরকার অপরিকল্পিত ভাবে লকডাউন তুলে আরও বিপদ বাড়িয়ে তুলছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করছেন৷ পাশাপাশি লোকাল ট্রেন, মেট্রোর মত গণপরিবহণ চালু না হলে অফিস কাছাড়ি কীভাবে পুরোপুরি খোলা সম্ভব তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা৷