বাগনান: সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভিন রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের সাত দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে৷ কিন্তু অভিযোগ, দিল্লি কিংবা মুম্বই থেকে আসা বহু পরিযায়ী শ্রমিককে ৩-৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখার পর সেখান থেকে তাঁদের ‘উচ্ছেদ’ করে ঘরে তালা ঝুলিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান৷ হাওড়ার বাগনান থানার অন্তর্গত বাঁটুল বৈদ্যনাথপুর অঞ্চলের খানজাদাপুর গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান প্রিয়জিৎ নন্দীর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ আনলেন কোয়ারেন্টিনে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা৷ পাল্টা অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান৷
এদিকে, ৮-১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থেকে বাড়ি ফেরা পরিযায়ীদেরও একাধিক সমস্যায় পড়তে হয়েছে৷ তাঁদের পাড়ায় ঢুকতে দিচ্ছে না স্থানীয় বাসিন্দারা৷ মুম্বই থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিক বিকাশ মণ্ডল
আজ বিকেল ডট কমকে জানান, খানজাদাপুরের মাঠে বন্যা ত্রাণের জন্য নির্মিত হল ঘরেই সরকারি কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ গ্রামে ফেরার পর ৮ দিন সেখানেই ছিলেন তিনি৷ কিন্তু গতকাল আচমকা পঞ্চায়েত প্রধান এসে প্রায় ৪৫ জনকে কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে বার করে দেন৷ এঁদের মধ্যে কেউ ২ দিন, কেউ বা ৪ দিন হয়েছে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে এসেছেন৷ গ্রামে ফেরার পর তাঁদের প্রবল সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে৷ অনেক আবেদন-নিবেদনের পর একটি নির্মীয়মান বাড়ির মধ্যে তাঁদের থাকার অনুমতি দেন পাড়ার লোকজন৷ গ্রামে ফিরেও খুবই কঠিন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এই পরিযায়ীরা৷ ছড়িয়ে থাকা ইট-বালির মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে তাঁদের৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই বাড়িতেই আপাতত আরও ১০ দিন থাকতে হবে তাঁদের৷ এখানে নিজেরাই রান্না করে খাচ্ছেন৷ অবশ্য খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করেছে পাড়ার লোকজনই৷ এই পরিস্থিতির জন্য পরিযায়ীরা আঙুল তুলেছেন পঞ্চায়েত প্রধানের দিকেই৷ অপর এক পরিযায়ী শ্রমিক বলেন, সামান্য একটা গন্ডগোলের জন্য কোয়ারেন্টিন থেকে সকলকে বার করে দেওয়া হয়েছে৷ এখানে মাত্র ছ’দিন ছিলেন তিনি৷ পাড়াতে ঢুকতেই শুরু হয় গন্ডগোল৷
আরও এক পরিযায়ী শ্রমিক অতনু পুরকাইত জানান, কোয়ারেন্টিনে ৬ দিন ছিলেন তিনি৷ কিন্তু গতকাল আচমকাই পঞ্চায়েত প্রধান এসে সকলকে বার করে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন৷ পাড়ায় ঢোকার পর তাঁর পরিবারকে একঘরে করার হুমকি দেয় প্রতিবেশীরা৷ একই সমস্যার মধ্যে পড়েছেন সুশান্ত খাঁড়া, জয়ন্ত খাঁড়া, সুনীল মণ্ডল, অলোক গুছাইত, চিন্ময় মণ্ডলের মতো পরিযায়ী শ্রমিকরা৷
এই বিষয়ে আজ বিকেল ডট কমের পক্ষ থেকে পঞ্চায়ের প্রধান প্রিয়জিৎ নন্দীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সকাল-সন্ধে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে গন্ডগোল করছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা৷ স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভের জন্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ কোয়ারেন্টিন সেন্টারে বিদ্যুৎ ছিল না৷ তা সত্ত্বেও তাঁদের সুস্থভাবে রাখার জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷ সব রকমভাবে তাঁদের খেয়াল রাখা হচ্ছিল৷ কিন্তু পরিযায়ীরা পথ চলতি লোকজনকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করেছে৷ যত্রতত্র থুতু ও চায়ের কাপ ফেলেছে৷ স্নানের জল ছিটিয়েছে৷ পরিবারের লোকেরা লুকিয়ে তাঁদের মদ দিয়ে গিয়েছে৷ সেখানে মত্ত অবস্থায় ভাঙচুর চালিয়েছে৷ বাধ্য হয়েই পরিযায়ীদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে৷
প্রিয়জিৎবাবু জানান, আশাকর্মীরা তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন৷ পঞ্চায়েতের সদস্যরাও যোগাযোগ রাখবেন, যাতে তাঁরা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকে৷ এর পরেও যদি কারও মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা যায় তাহলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হবে৷ যাঁরা ২-১ দিন হয়েছে এসেছে, তাঁদের অন্য কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পঞ্চায়েত প্রধান৷