‘দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না’! বাঙালির ‘মননে আঘাত’ রুদ্রনীলের

‘দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না’! বাঙালির ‘মননে আঘাত’ রুদ্রনীলের

কলকাতা:  আত্মকেন্দ্রিক দুনিয়ায় ক্রমেই ফিকে হচ্ছে মানবতার ধর্ম৷ ক্ষুদ্র স্বার্থ আর আমিত্বে ভরা জীবনে সমাজের জন্য ভাববার ফুরসত নেই৷ নেই হতভাগা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা৷ এভাবেই শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ৷ যতই বিপর্যয় আসুক, তাঁদের মুখে একটাই বুলি ‘দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না৷’’ এভাবেই রুদ্রনীলের কলমে বিদ্ধ হলেন স্বার্থান্বেষী মানুষের দল৷ 

‘যে যা করে দেখি ভাই, সুবিধাটা নিয়ে যাই৷ দুম করে প্রকাশ্যে আসিনা৷’ শুধু নিজের স্বার্থ সিদ্ধির বাইরে ভাববার অবকাশ নেই এই সকল মানুষের কাছে৷ দূরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুনিয়ার রঙ্গ তামাশা উপভোগ করা মানুষরা আসলে তো কুয়োর ব্যাঙ৷ রাজনীতি, দলাদলি কিংবা কোলাকুলি যে যা করছে করুক, এঁদের মুখে টু শব্দটুকু শোনা যায় না৷ দুনিয়া চুলোয় গেলে যাক, শুধু নিজে ভালো থাকলেই হল৷ শুধুমাত্র স্বার্থ সিদ্ধ করে খোলসে ঢুকে পড়াই এদের ধর্ম৷ দুনিয়াদারির পরোয়া নেই৷ নেই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা৷ 

ক’দিন আগেই উম্পুনের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল৷ উপড়ে পড়েছে শত শত গাছ৷ ভেঙেছে বিদ্যুতের খুঁটি৷ গৃহহীন অসংখ্য মানুষ৷ আলো-জলের দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে আমজনতা৷ চলেছে অবরোধ৷ কিন্তু তখনও সুবিধাবাদী মানুষের দল মুখ লুকিয়ে রেখেছে ঘরের চার দেওয়ালে৷ আর যখন সব স্বাভাবিক, তখন তাঁদের জ্ঞানবানী, ‘‘হুজ্জুতি, বাওয়ালি এত কি উচিত ছিল? যদিও বা এতশত বুঝি না৷ বারান্দা থেকে আমি নামি না৷ দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না৷’’ 

সকলের সঙ্গে কণ্ঠ মেলানোর চেয়ে ঘরে বসে মাস্ক বা বউয়ের শাড়ি কাচা, কিংবা মাঝে মধ্যে হেঁশেলে ঢুকে দুই এক পদ রান্না করাই তাঁদের কাছে অনেক বেশি জরুরি৷ কে মরছে বা কার ঘর ভাঙছে, সে সব নিয়ে ফালতু ভাবনা তাদের পোশায় না৷ এই সব মুখোশধারী মানুষগুলোর মধ্যে  ন্যূনতম মানবিক সত্ত্বাটুকুও নেই৷ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোতেও এবার করোনার ছায়া পড়তে চলেছে৷ সব আনন্দই যেন ম্লান হয়ে যাবে৷ কিন্তু এক শ্রেণির কৃপণ মানুষ তখনও ভাবছে, যাক, এবারে আর কাউকে জামা-কাপড় দিতে হবে না৷ পাড়া থেকে চাঁদা চাইতে আসলে, করোনার দোহাই দিয়ে ১০ টাকা হাতে গুঁজে বিদায় জানানো যাবে৷  

কেউ যদি না খেতে পেয়ে মরেও যায়, তাতে কিছু এসে যায় না৷ সামান্য ১০০ টাকা দান করতে গিয়ে ছাতি ফেটে যায় তাঁদের৷ সুর উচিয়ে বলেন, ‘‘ত্রানের ১০০ টাকা কেড়ে নিল ছেলেরা, পাশে শালা ছিল বলে দিয়েছি, আমার ঝামেলা নিয়ে আমি আছি চুপচাপ, কারো থেকে কোনও কিছু চেয়েছি?’’ দেশের চিন্তা করার যত দায় কি শুধু দেশের নেতাদের৷ মানুষ হিসাবে আমাদের কি কোনও দায়িত্বই নেই? 

শুধু গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করাটাই একজন নাগরিকের দায়িত্বের শেষ নয়, সেটা সকলেরই বোঝা উচিত৷ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাঁচা যায় না৷ প্রতিটি পদক্ষেপ সন্তর্পণে ফেলে জীবন কাটিয়ে যাওয়ার মধ্যে কী আদৌ কোনও বীরত্ব রয়েছে?  আখের গোছানো এই মানুষরা বারান্দা থেকে না নামলেও, পাড়ায় বিধায়ক এলে সবার আগে এরাই ছুটে গিয়ে হাত নাড়ায়৷ কিন্তু সেখানেও চলে ভনিতা৷ প্রতিবাদ নয়, বরং চলে হাসিমুখে বাজি মাত করার প্রচেষ্টা৷ কে কি বলল, তাতে তাঁদের পরোয়া নেই৷ বজ্জাত বললেও লাভ নেই, কারণ এরা প্রকৃতই ‘বধির’৷ ‘জানি তুমি বলবে আমি হার বজ্জাত, লাভ নেই কানে বেশি শুনি না৷ দু’বছর হয়ে গেল এভাবেই চলছে, ডাক্তার খরচও করিনা৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × four =