কেন্দ্রের কাছে কত টাকা ক্ষতিপূরণ চাইল রাজ্য? কী বলছে বিরোধী শিবির?

কেন্দ্রের কাছে কত টাকা ক্ষতিপূরণ চাইল রাজ্য? কী বলছে বিরোধী শিবির?

কলকাতা:  উম্পুন বিধ্বস্ত দুই ২৪ পরগণা পরিদর্শনে আসা ৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতারা৷  দক্ষিণ ২৪ পরগণার মিনাখা পরিদর্শন করে আসার পরই রাজ্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা৷

বৈঠকের পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, রাস্তা, বাঁধ ভেড়ি সবই তৈরি হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকার এর জন্য টাকা দেবে৷ কিন্তু এই টাকা যাতে যথাযথ ব্যবহার করা হয়, তা দেখার জন্য কমপক্ষে ৬ মাস থেকে ১ বছরের জন্য কেন্দ্রের একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করা উচিত৷ এই কাজের দায়িত্ব কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকেও দেওয়া যেতে পারে, যাতে ঠিক মতো বাঁধ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়৷ আয়লার পর যে ৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল সে টাকা এখনও সপূর্ণ খরচ হয়নি৷ তাঁর দাবি, ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা দেওয়া হোক৷ কেন্দ্র থেকে যে টাকা আসবে তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দলীয় কর্মীদের নির্বাচনের ফান্ড তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগণার কিছু জায়গা পরিদর্শন করেই কেন্দ্রীয় দল বুঝে গেল উম্পুনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ৷ কোনও একটা জায়গা ঘুরে কোথায় কতটা ক্ষতি তা বোঝা সম্ভব নয়৷ যেখানে রাজ্যের দায়িত্ব সেখানে কেন্দ্র যেন খবরদারি করার চেষ্টা না করে৷ সবাই মিলে কাজ করুন৷ রাজ্য সরকার যেন ন্যায্য টাকা পায়৷

আবার বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, উম্পুন বিপর্যয়কে জাতীয় বিপর্যয় হিসাবে ঘোষণা করতে হবে৷ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরেজমিনে খতিয়ে দেখার পর রাজ্য যেন দ্রুত যথাযথ সাহায্য পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে৷ কোভিড পরিস্থিতিতে দিল্লি ও রাজ্য লোক দেখানো ঝগড়া করে মানুষের সর্বনাশ করেছে৷ কেন্দ্র থেকে যে টাকা আসবে চা যেন ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছয়৷ ত্রাণের টাকায় দলবাজি আর লুট চলবে না৷ আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা পরিদর্শন করেছি৷ আমাদের অভিজ্ঞতা কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি৷ কেন্দ্রীয় দল সাগর, নামখানার মতো জায়গায় যেতে পারেনি৷ আরও অনেক জায়গা আমরা ঘুরে দেখেছি৷ যেখানে তাঁরা যাননি৷ সে সব জায়গায় প্রচুর মাটির বাড়ি পড়ে গিয়েছে৷ ত্রিপল পর্যন্ত পায়নি সেখানকার মানুষ৷ 

এর পরেই পাল্টা আক্রমণ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার প্রতিটি মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন৷ যাঁদের ডিজিটাল রেশন কার্ড নেই৷ তাঁদের কুপোন দেওয়া হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে কোনও মানুষ অনাহারে মারা যায়নি৷ মিড-ডে মিল দেওয়া হচ্ছে৷  ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন৷ অথচ সে কথা কেউ বলছে না৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খাটো করার চেষ্টা চলছে৷ তাঁকে সরানোর জন্য সব রকমভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এটা রাজনীতি করবার সময় নয়, মানুষকে বাঁচানোর সময়৷ 

এদিকে, শনিবার বিকেলে নবান্নে রাজ্যের সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক করে কেন্দ্রীয় দলের বৈঠক৷ নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের তরফে উম্পুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে৷ লিখিত ভাবে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে৷ এই রিপোর্টে ১ লক্ষ ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দেখানো হয়েছে৷ কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ জমিতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে৷ বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়ছে লবণাক্ত জল৷ মাছের ভেরিগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এছাড়াও বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙে পড়েছে৷ ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে ২১ লক্ষ বাড়ি৷ রাস্তাঘাট ও সেতুর ক্ষতি হয়েছে৷ সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ২ হাজার ৪০০ কোটি  টাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে৷ 

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় দু’দিন ধরে ঘুরে দেখেছ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল৷ সফর সূচিতে না থাকলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মথুরাপুরে আচমকা হাজির হয়ে যান কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষ দলের প্রতিনিধিরা৷ সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন৷ ঝড়ের পর মুখ্যমন্ত্রী বলছিলেন, ১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ আজ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কাছে প্রায় সেই পরিসংখ্যানটাই তুলে ধরা হয়েছে৷ তবে ইতিমধ্যেই ১ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে রাজ্য সরকার৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 14 =