৩ ঘণ্টা অনলাইন ক্লাস করিয়ে সম্পূর্ণ ফি নিচ্ছে স্কুল, সরব রাঘব চট্টোপাধ্যায়

৩ ঘণ্টা অনলাইন ক্লাস করিয়ে সম্পূর্ণ ফি নিচ্ছে স্কুল, সরব রাঘব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা:  কোভিড-১৯ এর জেরে লকডাউন পরিস্থিতিতে বন্ধ সমস্ত স্কুল-কলেজ৷ স্কুলের বদলে পড়ুয়ারা ঘরে বসেই হাজিরা দিচ্ছে অনলাইন ক্লাসে৷ সরকার তো বটেই, এখন ভার্চুয়াল ক্লাসের উপরই অধিক জোড় দিচ্ছে অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু অনলাইন ক্লাসের যে একাধিক সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে কি একবারও ভেবে দেখা হচ্ছে? অনলাইন পঠনপাঠনের সমস্যা এবং স্কুলগুলির ভূমিকা নিয়ে এবার সরব হলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায়৷ 

ফেসবুকে শেয়ার করা একটি ভিডিয়োতে রাঘব জানান, তাঁর দুই মেয়েই এখন স্কুল পড়ুয়া৷ তাদের মতো হাজার হাজার ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করছে৷ এই অনলাইন ক্লাসে ছেলেমেয়েরা কতখানি শিখতে পারছে, তা হয়তো ভবিষ্যত বলবে৷ কিন্তু এই তিন চার ঘণ্টা অনলাইন ক্লাসের জন্য স্কুল অভিভাবকদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ফিজ নিচ্ছে৷ তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমাদের মতো দেশে প্রত্যেক অভিভাবকের হাতে স্মার্টফোন থাকবে, তার কোনও মানে নেই৷ তাহলে তাঁদের সন্তানরা কী করবে? সেটা কি স্কুল কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখেছে? প্রশ্ন তুলেছেন রাঘব৷ 

রাঘব বলেন, বেসরকারি স্কুল তো বটেই সরকারি স্কুলগুলিও অনলাইন ক্লাসের জন্য চাপ দিচ্ছে৷ তাঁর কথায়, আমার মেয়েরা কিংবা আরও অনেকের ছেলেমেয়েরাই হয়তো অনলাইন ক্লাস করতে পারছে, কিন্তু কোনও জুট মিলের শ্রমিক, কিংবা দোকানের কর্মচারী বা কারখানায় কাজ করে ১০-১২ হাজার টাকা রোজগার করা বাবা-মায়েরা কী ভাবে স্মার্ট ফোনের জোগার করবেন৷ তাঁরা অনেক কষ্ট করেই ছেলেমেয়েদের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম কিংবা বাংলা মাধ্যমের সরকারি স্কুলে পড়াশোনা শেখাচ্ছেন৷ তাঁদের এখন বলা হচ্ছে অনলাইন ক্লাস হবে৷ অর্থাৎ এর জন্য ৮-১০ হাজার টাকা খরচ করে স্মার্ট ফোন কিনতে হবে৷ মাসের পর মাস যাঁদের রোজগার বন্ধ, পেট চালানোই দায়, তাঁদের কাছে কি স্মার্টফোন কেন সম্ভব? 

তিনি বলেন, কোনও ভাবে কারও থেকে একটা ফোনের ব্যবস্থা যদিও বা করলেন, ইন্টারনেট খরচ কোথা থেকে আসবে, সেটাও ভেবে দেখা হচ্ছে না৷ ফলে তাঁদের ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে৷ বিদেশে ই-লার্নিং এর চল রয়েছে৷ একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে বহু দেশ ঘোরার অভিজ্ঞতা থেকে রাঘব বলেন, বিদেশে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের শুধু স্মার্ট ফোন নয়, ল্যাপটপ পর্যন্ত দেওয়া হয় পড়াশোনা করার জন্য৷ আমাদের দেশে এসবের কোনও বালাই তো নেই ই, উল্টে প্রতি মাসে ফি জমা দেওয়ার রিমাইন্ড চলে আসে৷ এই ফি থেকে শিক্ষকদের বেতন দিতে হয় ঠিকই৷ কিন্তু এই ক’মাসে লকডাউনে স্কুলগুলির অনেক খরচই কমে গিয়েছে৷ যেমন লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি চার্জ, বিদ্যুতের বিল, স্কুল পরিচর্চার খরচ ইত্যাদি৷ কিন্তু এই সকল খরচগুলি স্কুল ফি থেকে বাদ দেওয়া হয়নি৷ পুরো ফি’ই অভিভাবকদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে৷ এই বিষয়ে প্রতিটি অভিভাবকেরই সরব হওয়া উচিত বলে মনে করেন রাঘব৷ এই দুঃসময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও এই বিষয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি৷ 

লকডাউনে অধিকাংশ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়েছে৷ সেখানে কয়েক ঘণ্টা ক্লাস করিয়ে পুরো ফি নেওয়া কতটা যুক্তি সঙ্গত, তা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন রাঘব৷ তিনি বলেন, যখন হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন, বেতন কাটা হচ্ছে, তখন স্কুলের সম্পূর্ণ ফি নেওয়া বন্ধ করা উচিত বলেই মনে করেন তিনি৷ অন্তত ৫০ শতাংশ ফিজ কমানোর অনুরোধ জানিয়েছেন রাঘব৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *