নয়াদিল্লি: নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা উত্তর আটলান্তিক চুক্তি সংগঠনকে সংক্ষেপে বলা হয় নেটো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জন্ম হয় এই সংস্থার। সাল ১৯৪৯। উদ্দশ্য, সদস্য দেশগুলিতে শান্তি বজার রাখা৷ বর্তমানে নেটোর ছাতার নীচে রয়েছে ৩১টি দেশ৷ যার মধ্যে অন্যতম আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, ইটালি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই সংগঠনের সদস্য নয় ভারত৷ তবে সম্প্রতি আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ এই সংগঠনে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে নয়াদিল্লিকে। পরোক্ষ ভাবে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।
আমেরিকার সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক ভারতের। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে নেটোর সদস্যপদ গ্রহণ করে সেই মিত্রতাকে খাতায়কলমে স্বীকৃতি দেয়নি নয়াদিল্লি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান বেশ নিরপেক্ষ। আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দেওয়ার অর্থ আমেরিকা বিরোধী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা৷ এবং এ ক্ষেত্রে ভারতের সবচেয়ে বেশি মাথা ব্যথার কারণ রাশিয়া। কারণ, আমেরিকার মতো রাশিয়ার সঙ্গেও হৃদ্যতা রয়েছে ভারতের৷ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুতিন বাহিনী সামরিক অভিযান শুরুর পরেও ভারত কোনও দিন সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেনি৷ এখন আমেরিকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারত নেটোর সদস্য দেশ হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। এ নিয়ে দোটানায় পড়েছে নয়াদিল্লি।
নেটোর সদস্যপদ গ্রহণের আহ্বান অগ্রাহ্য করলে একদিকে যেমন আমেরিকার বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কা, অন্য দিকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ভারতের পক্ষে নেটোর সদস্যপদ গ্রহণ হবে বিপদের সংকেত। আবার নেটোর সামিল হওয়ার জন্য ভারতকে আহ্বানের মধ্যে নেটো কিংবা আমেরিকার কোনও পরিকল্পনা থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ, নেটোর ইতিহাস ঘাটলে বহু ষড়যন্ত্রের কাহিনী উঠে আসবে৷
অতীতে দেখা গিয়েছে, লিথুয়ানিয়া, এস্টোনিয়া, আজারবাইজানের মতো ছোট দেশগুলি খুব সহজেই নেটোর পাতা ফাঁদেই পা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উন্নত দেশও নেটোর ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পায়নি৷ যদিও দক্ষিণ কোরিয়া এখনও নেটোর সদস্য পদ গ্রহণ করেনি৷ নেটোতে যোগ দেওয়ার জন্য ছোট ছোট দেশগুলির উপর পরোক্ষে চাপ সৃষ্টি করা হয়৷ সেই সঙ্গে গড়ে তোলা হয় রাশিয়া বিরোধী মনোভাব৷
গত কয়েক বছর ধরেই ভারতকে নেটোর সদস্য করার জন্য বেশ তৎপরতা চোখে পড়ছে। প্রকাশ্যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের জন্য আহ্বান জানানোই নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে নেটো সদস্যেরা। ২০২০ সালে ভারত-চিন সীমান্তে সংঘর্ষের সময় নেটোর অন্যতম সদস্য দেশ ফ্রান্স প্রকাশ্যে ভারতের সামরিক সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল।
কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করেন, নেটোর সদস্য দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার আশ্বস দেওয়ার পাশাপাশি শান্তি রক্ষার কথাও বলা হয়৷ কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে অন্য উদ্দেশ্য। মূলত নেটোর মূল নিয়ন্ত্রক আমেরিকা ছোটখাটো দেশগুলিকে এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তাদের উপর ছড়ি ঘোরানোর পথ প্রশস্ত করে৷ এখন ‘নিরপেক্ষ’ ভারতকেও কি এই ফাঁদে ফেলতে পরাবে আমেরিকা?
আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসছে৷ ভারতের কি নেটোকে প্রয়োজন আছে? এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলত হয় ভারতের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার কথা। দেশ যত দিন সুরক্ষিত আছে, বহিরাগত শত্রুর হাত থেকে ভারত যত দিন নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম, তত দিন নেটোর মতো সংগঠনে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই দিল্লির। অন্তত এমনটাই অভিমত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>