বাড়িতে বসে বেতন নেব কেন? দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ালেন শিক্ষক দম্পতি

বাড়িতে বসে বেতন নেব কেন? দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ালেন শিক্ষক দম্পতি

দুর্গাপুর:  লকডাউনে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটচ্ছে শত শত মানুষের৷ বন্ধ হয়েছে তাঁদের রোজগার৷  জুটছে না দু’বেলা দু’মুঠো খাবার৷ এই দুঃসময়ে এই সকল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেন বর্ধমানের এক শিক্ষক দম্পতি৷ 

প্রায় তিন মাস হতে চলল, বন্ধ রয়েছে স্কুল৷ যেটুকু ক্লাস হচ্ছে, তা ওই অনলাইনে৷ কিন্তু প্রতি মাসে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে শিক্ষকদের বেতন৷ তাই বেতনের একটা বড় অংশ মানুষের সেবার নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন এই দম্পতি৷ অন্ডালের হাইস্কুল পাড়ার বাসিন্দা শোভন সরকার ও তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা দু’জনেই প্রাথমিক স্কুলে পড়ান৷ শোভনবাবু বর্ধমানের জিয়ারা স্কুলের শিক্ষক। আর প্রিয়াঙ্কা পড়ান অন্ডালের দামোদর কলোনির অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। লকডাউনের মধ্যে এক পড়ুয়ার খবর নিতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কার  চোখে পড়ে মানুষের অসহায়তার ছবি৷ ঠিক করেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন৷ নিজেদের বেতনের টাকায় পৌঁছে দেবেন খাদ্য সামগ্রী৷ 

প্রিয়াঙ্কা জানান, লকডাউনের শুরুতে তাঁর স্কুলের এক পড়ুয়ার বাড়ি খোঁজ খবর নিতে গিয়েছিলেন তিনি৷ সেখানে গিয়ে বোঝেন কতটা অসহায়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা৷ এক কাপ চা করে দেওয়ারও ক্ষমতাও নেই তাঁদের৷ বাড়িতে এসে ঘটনাটা তাঁর স্বামীকে জানান৷ এর পরই দু’জনে ঠিক করেন দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবেন৷ এপ্রিল-মে মাসে প্রথমে রান্না করা খাবার বিলি করেছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু পরে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণের জন্য কুপোনের ব্যবস্থা করেন শোভন ও প্রিয়াঙ্কা৷ 

তাঁরা জানান, দুই রকম কুপোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ একটি ৫০০ টাকার ও অন্যটি ১০০০ টাকার৷ প্রয়োজন অনুযায়ী দুঃস্থ পরিবারগুলির হাতে এই কুপোন তুলে দিচ্ছেন শোভন-প্রিয়াঙ্কা৷ যা দিয়ে সংসারের জন্য চাল, ডাল, তেন, নুন, মাশলাপাতি কিনছেন গরিব মানুষগুলো৷ এর জন্য অন্ডালের একটি মুদি দোকানে ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়ে রেখেছেন এই দম্পতি৷ কুপোন নিয়ে এই দুঃস্থ মানুষগুলি সোজা চলে যাচ্ছেন সেই মুদি দোকানে৷ কুপোন দেখিয়ে নিয়ে আসেন প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী৷ ১৫০টি কুপোন তৈরি করেছেন তাঁরা৷ গত তিন দিনে ১২৮ জনের মধ্যে এই কুপোন বিলি করা হয়েছে৷ নিজেরাই ঘুরে ঘুরে বিলি করছেন কুপোন৷ 

এই সাহায্য পেয়ে খুশি স্থানীয় মানুষ৷ এই ভাবে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই তাঁদের বেতনের পুরো টাকা দিয়ে যে ভাবে গরিব মানুষদের সাহায্য করছে, সেটা দেখে তাঁরা অভিভূত৷  শোভন বলেন, প্রিয়াঙ্কা যেদিন বলল, তাঁর এক ছাত্রের বাড়িতে সামান্য চা কেনারও পয়সা নেই, সেদিনই ঠিক করি আমরা আমাদের বেতনের টাকা দিয়ে মানুষকে সাহায্য করব৷ তাছাড়া তিন মাস স্কুলেও যেতে হচ্ছে না৷ বিনা পরিশ্রমেই টাকা পাচ্ছি৷ তাই একটা ভালো কাজে এই টাকা খরচ করলে ক্ষতি কিসের?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − ten =