ব্রিটিশ দিয়েছে ‘চোর’ তকমা, ১৫০ বছরের আইনি মুছতে আদালতে ‘শবর পিতা’

সমাজে তাঁরা 'বঞ্চিত'। সেই ইংরেজ শাসনকাল থেকেই চলে আসছে সেই নিয়ম। এমনকী, খাতায় কলমে 'ক্রিমিনাল' উপজাতি বলেও দাগিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন শাসকদল। স্বাধীন ভারতে আইনের নাম বদলালেও 'থিম' রয়েছে প্রায় একই। তবে সমাজ এখনও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি শবর জাতিকে। যেকোনও অপরাধমূলক কাজের দায় অলিখিতভাবে পড়ে তাঁদের ওপর। তথাকথিত সেই নিয়মের বিরুদ্ধেই এবার সরব হলেন এলাকায় 'শবর পিতা' নামে পরিচিত কলকাতা সাউথের ট্রাফিক কনস্টেবল অরূপ মুখোপাধ্যায়। এমনকী, এই চিরাচরিত নিয়ম বদলের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন তিনি।

 

পুরুলিয়া: সমাজে তাঁরা 'বঞ্চিত'। সেই ইংরেজ শাসনকাল থেকেই চলে আসছে সেই নিয়ম। এমনকী, খাতায় কলমে 'ক্রিমিনাল' উপজাতি বলেও দাগিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন শাসকদল। স্বাধীন ভারতে আইনের নাম বদলালেও 'থিম' রয়েছে প্রায় একই। তবে সমাজ এখনও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি শবর জাতিকে। যেকোনও অপরাধমূলক কাজের দায় অলিখিতভাবে পড়ে তাঁদের ওপর। তথাকথিত সেই নিয়মের বিরুদ্ধেই এবার সরব হলেন এলাকায় 'শবর পিতা' নামে পরিচিত কলকাতা সাউথের ট্রাফিক কনস্টেবল অরূপ মুখোপাধ্যায়। এমনকী, এই চিরাচরিত নিয়ম বদলের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন তিনি।

সাল ১৮৭১। উত্তর ভারতের জন্য ক্রিমিনাল ট্রাইবস অ্যাক্ট ১৮৭১ চালু করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। যার মাধ্যমে বহু উপজাতিকে অপরাধী বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। ১৮৭৬ সালে বাংলায়ও চালু হয় সেই আইন। ১৯১১ সালে চালু হয়েছিল মাদ্রাজে। এরপর বেশ কয়েকবার সংশোধনের পর ১৯২৪ সালে ক্রিমিনাল ট্রাইবস অ্যাক্ট ১৯২৪ চালু হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে প্রথম ডিনোটিফাই করা হয়। এরপর ১৯৫২ সালে রিপিল করা হয় আইনটিকে। নাম বদল করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পরও বেশ কিছু উপজাতিকে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। ১৯৬১ সাল নাগাদ কয়েকটি উপজাতিকে সেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলেও জারি থাকে লাঞ্ছনার ধারা। এমনই তথ্য তুলে ধরেছেন আইনজীবী অঞ্জন দত্ত। আদালতে তিনিই লড়বেন অরূপ মুখোপাধ্যায়ের মামলার পক্ষে। পেশায় ট্রাফিক কনস্টেবল অরূপবাবু সমাজে শবর উপজাতির সম্মান ফিরিয়ে আনতেই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এলাকার সবাই আমাকে 'শবর পিতা' বলেন। আর শবররা আমাকে বাবা বলে ডাকে। সন্তানের দুঃখ, কষ্টের সময়ে বাবাকেই তো দেখভাল করতে হয়। ওদের হয়ে আমি শেষপর্যন্ত লড়ব। ওদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়াই আমার লক্ষ্য।'

শবর উপজাতির বঞ্চনার কথা ছোটবেলা থেকেই শুনেছেন অরূপ বাবু। এলাকায় চুরি কিংবা ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কাজ হওয়া মানেই দায় গিয়ে পড়ত তাঁদের ওপর। আর্থিক অসহায়তা ও শিক্ষার অভাবের জন্যই তাঁরা আজ বঞ্চনার শিকার, এমনটাই শুনেছিলেন অরূপবাবু। তিনি বলেন, 'আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন চুরি-ডাকাতি হতো, আমার দাদু বলত শবররাই চুরি করেছে। তখন আমার মাত্র ৫ বছর বয়স। দাদুকে পাল্টা প্রশ্ন করতাম, শবররাই চুরি করে কেন? তখন দাদু বলতেন, পেটে খিদের জ্বালা অথবা শিক্ষার অভাবেই এই কাজ করে ওরা। তখন আমি বলেছিলাম, ওঁদের শিক্ষার জন্য আমি স্কুল বানাব। দাদু বলতেন, বড় হ, তারপর বানাবি।' পুরুলিয়ার পুঞ্চা গ্রামে স্কুল বানিয়েছেন তিনি। পুঞ্চা নবদিশা মডেল স্কুল। এবার সেই শবর উপজাতির জন্যই মামলার পথে হাঁটছেন তিনি। বর্ণবিদ্বেষ, সামাজিক ভেদাভেদের এই অস্থির সময়ে পুরুলিয়ার অরূপ মুখোপাধ্যায় আজ একটা দৃষ্টান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =