কলকাতা: লকডাউনের শারীরিক দূরত্ব যেন হৃদয়ের আদানপ্রদানে ব্যহত না করে, শুরুতেই দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ দেশের যুব সম্প্রদায় তাঁর সেই কথা রেখেছেন৷ প্রায় তিন মাস ব্যাপী লকডাউন চলাকালীন গোটা দেশ কার্যত স্তব্ধ হেয়ে গেলেও ব্যহত হয়নি হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের মেলবন্ধন৷ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, লকডাউন চলাকালীন এরাজ্যে প্রায় ছ’হাজার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে! লকডাউনের বিধি নিষেধের গেরোয় অতিথি, আপ্যায়ন, ভূরিভোজের মতো নানা অনুষঙ্গ স্থগিত থেকেছে৷ কিন্তু সংকট কালেও প্রিয় মানুষের সঙ্গে হৃদয়ের গ্রন্থি বন্ধন চুপিচুপি সেড়ে ফেলেছেন বহু তরুণ-তরুণী৷ আনলক পর্ব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে বেড়েছে নতুন বিয়ে ও বিয়ের জন্য আবেদনের পরিমাণও৷
গত ২৫ মার্চ থেকে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সামাজিক দূরত্ব নিয়ে বিধি নিষেধের জেরে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা লাগু হওয়ায় অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান স্থগিত হয়ে যায়। তবে অনেকে অবশ্য এতে দমেননি৷ রাজ্যের আইন বিভাগের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ম্যারেজ দফতর সূত্রে খবর, লকডাউন চলাকালীন প্রজাপতির ওড়াউড়িতে কোন ছেদ পড়েনি। অনেকে বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখলেও আইন মেনে রেজিস্ট্রি বিবাহ সেরে ফেলেছেন ওই সময়। এপ্রিল ও মে মাস জুড়ে রাজ্যে মোট ৫৭৫২ জন নবদম্পতি গাঁটছড়া বেঁধেছেন। এর বেশির ভাগই হিন্দু বিবাহ আইন এবং বিশেষ বিবাহ আইনে নিবন্ধীকৃত। এপ্রিল মাসে রাজ্যে রেজিস্ট্রির সংখ্যা ১৪৭১। মে মাসে ওই সংখ্যা ৪২৮১। তবে লকডাউন বিধি অনুযায়ী এই সময়ে সব বিয়ে হয়েছে কোভিড মুক্ত গ্রিণ জোনে৷ রেড ও অরেঞ্জ জোনে অন্য সব কিছুর মতো বিবাহ নিবন্ধীকরণের কাজও স্থগিত ছিল৷.
জুন মাসে আনলক পর্ব শুরু হতেই বিয়ের সংখ্যা ও আবেদন স্বাভাবিক ভাবেই আরও বেড়েছে। রেজিস্ট্রির পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বেঁধে দেওয়া ২৫ জন অতিথি সংখ্যা নিয়ে ছোটখাটো অনুষ্ঠানও সেড়ে ফেলছেন কেউ কেউ৷ ম্যারেজ রেজিস্ট্রার দফতরের তথ্য বলছে, ১ জুন থেকে ১৮ জুনের মধ্যে রাজ্যে ৫৬৫৪ টি বিয়ে হয়েছে৷ অবশ্য তা হয়েছে সবরকমের সুরক্ষাবিধি মেনেই৷ করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ মহামারীর ছোঁয়া থেকে বাঁচতে শারীরিক দূরত্বের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন৷ এই শারীরিক এবং সামাজিক দূরত্ব যেন হৃদয়ের সম্পর্কের পথে অন্তরায় না হয়৷ তারপর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে৷ তিনমাস লাগাতার লকডাউনের পর আনলক পর্বে ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার মরিয়া চেষ্টা করছেন দেশের মানুষ৷ লকডাউন কালে কার্যত স্তব্ধ ছিল প্রায় সবরকমের যোগাযোগ৷ ঘরবন্দি থেকেছে গোটা দেশ৷ তবে যুব সমাজের হৃদয়ের গতি স্তব্ধ হয়নি৷ পরিসংখ্যানেই তার প্রমান মিলছে৷