মগরাহাট: জন্ম থেকেই পা দুটো অচল তার৷ শরীরের বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোও ঠিক মতো কাজ করে না৷ হাতটুকু শুধু কোনওরকমে নাড়াচাড়া করতে পারে সে৷ এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এই বছর ডিহিকলস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল বাপি ফকির৷ বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মগরাহাট অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ইন্সটিটিউশনে গিয়ে পরীক্ষা দেয় সে৷ বেঞ্চে শুয়েই পরীক্ষা দেয় বাপি৷ গতকাল প্রকাশিত হয় মাধ্যমিকের ফলাফল৷ যাবতীয় প্রতিকূলতাকে হারিয়ে মাধ্যমিকে সফল বাপি ফকির৷
বাপির পেয়েছে বাংলায় ৪৮, ইংরেজিতে ৪৯, গণিতে ৩১, ভৌত বিজ্ঞানে ৫২, জীবন বিজ্ঞানে ৩৬, ইতিহাসে ৪৮ এবং ভূগোলে ৪৮। মোট প্রাপ্ত নম্বর ৩১২৷ পরীক্ষার সময় নিয়ম মেনে ৪৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছিল তাঁকে৷
বাপির বাবা পেশায় সামান্য দর্জি৷ কষ্ট করেই চলে সংসার৷ এর মধ্যে রয়েছে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা, পড়াশোনার খরচ৷ বাপির মা সেরিনা বলেন, ‘‘ছেলেকে নিয়ে অনেক হাসপাতালে ছুটেছি৷ কিন্তু কোথায় কোনও কাজ হয়নি৷’’ ঠিক মতো বসতেও পারে না বাপি৷ তার উপর পরীক্ষার আগে একপাশ ফিরে শুতে শুতে ঠাণ্ডা লেগে একটা কানে শুনতে পাচ্ছে না সে৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কানে মেশিন বসাতে হবে৷ এর জন্য খরচ হবে ২৫ হাজার টাকা৷ সামান্য দর্জির কাজ করে এত টাকা কী ভাবে জোগাড় করবে, তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না তাঁরা৷
মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর স্বভাবতই মেধা তালিকায় থাকা পড়ুয়াদের নিয়ে শুরু হয়েছে উচ্ছ্বাস৷ তাদের সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছে বাংলার মানুষ৷ কিন্তু তাদের মতো স্বাভাবিক না হয়েও, বাপির এই সাফল্য কোনও অংশ কম নয়৷ তার সাফল্যে খুশি তার প্রতিবেশিরা৷ তাকে ভরিয়ে দিয়েছে শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায়৷
বুধবার প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল৷ ১৩৯ দিন পর ফল প্রকাশ হবলেও পরীক্ষার্থীরা এখনই মার্কশিট পাবেন না৷ পরে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ আগামী ২২ ও ২৩ জুলাই মার্কশিট স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ এবার সাফল্যের নিরিখে প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুর৷ এই জেলায় সাফল্যে হার ৯৬.৫৯ শতাংশ৷ একটু উন্নতি করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে কলকাতা৷ সাফল্যের হার ৯১.০৭ শতাংশ৷ এবছর পাসের হার বেড়েছে৷ ৮৬.৩৪ শতাংশ৷ সাফল্যের শীর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা৷ পাসের হার ৯৬.৫৯ শতাংশ৷ দ্বিতীয় পশ্চিম মেদিনীপুর৷ ৯২.১৬ শতাংশ। তৃতীয় কলকাতায় পাসের হার ৯১.০৭ শতাংশ৷