ওয়াশিংটন: কোভিড-১৯ ভাইরাসকে বাগে আনতে বিশ্ব জুড়ে চলেছে গবেষণা। এই বৈশ্বিক মহামারীর প্রকোপ থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। গবেষণার ফলাফল অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকরী বলেও দাবি করেছেন একাধিক দেশের গবেষকরা। সেখান থেকেই উঠে আসছে একাধিক ওষুধের নাম যা বর্তমানে বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নিশ্চিত ভাবে নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধকের খোঁজ এখনও মেলেনি। যেমন এই মুহুর্তে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য ক্লোরোকুইন বা হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইনের ব্যবহার বিশ্বের বহু দেশে ব্যাপক হারে বাড়ছে। কিন্তু এই ওষুধটি এখনও পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
এবার এই তালিকায় জুড়ে গেলো আরও একটি ওষুধের নাম, ইভারমেকটিন। আশ্চর্যের বিষয় এটি একটি প্রচলিত অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক যা বিভিন্ন পরজীবী যেমন মানুষের মাথার উকুন বা অন্যান্য প্রাণীদের গায়ে বসবাসকারী পরজীবী মারতেও ব্যবহৃত হয়। এই নতুন গবেষণায় আশার আলো দেখাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। গবেষণায় দেখা গেছে যে ইভারমেকটিন নামে উকুন নাশক একটি ওষুধ কোভিড-১৯ এর ওপর অন্তত কার্যকরী প্রভাব ফেলছে। এই ওষুধ মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা ভাইরাসের মাত্রা ৯৯. ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়েছে এবং তিনদিনের মধ্যে এই ভাইরাসকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে পেরেছে। আসলে ইভারমেকটিনের একটি মাত্র ডোজ প্রয়োগ করে কোভিড-১৯ ভাইরাসের কোষের আকারে বৃদ্ধির প্রবনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে। তাও মাত্র ৪৮ঘণ্টার মধ্যেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ অর্গানাইজেশনও এই ওষুধ ব্যবহার করে করোনা মোকাবিলার উপায় খুঁজছেন বলে জানা গেছে।
যদিও গবেষকরা জানিয়েছেন যে ইভারমেকটিন কীভাবে ভাইরাসের ওপর কাজ করে এবং ভাইরাসটির হোস্ট কোষগুলির বৃদ্ধি কমিয়ে দেয় তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সংবাদ মাধ্যম 'দ্য সান'-এ এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ডাঃ কাইলি ওয়াগস্টাফের কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে। কাইলি বলেছেন “আমরা দেখতে পেয়েছি যে এই ওষুধের একটি মাত্র ডোজও প্রয়োজনীয়ভাবে সমস্ত ভাইরাল আরএনএ (কার্যকরভাবে ভাইরাসটির সমস্ত জিনগত উপাদানগুলি সরিয়ে নিয়েছে) ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলতে পারে এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এর মধ্যে সত্যিই উল্লেখযোগ্য হ্রাস লক্ষ্য করা গেছ।”
ডাঃ ওয়াগস্টাফ বলেন “আমরা বিশ্বব্যাপী মহামারীর শিকার হচ্ছি এবং অনুমোদিত চিকিৎসা নেই, যদি আমাদের কাছে এমন একটি কম্পাউন্ড থাকে যা ইতিমধ্যে বিশ্বে সহজলভ্য তবে তা মানুষকে তাড়াতাড়ি সাহায্য করতে পারে। বাস্তবে প্রতিষেধক আকারে এটি ব্যাপকভাবে উপলব্ধ হতে এখনও সময় লাগবে। পরবর্তী পদক্ষেপ হ'ল মানুষের জন্য বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষিত এই ওষুধের সঠিক ডোজ নির্ধারণ করা।”
অন্যদিকে,ভিক্টোরিয়ান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনি মিকাকোস এই ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার না করার আর্জি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে সাধারণ মানুষ যেন এই ওষুধটির প্রয়োগ শুধুমাত্র মাথার উকুনের জন্যই করেন। কারন পুরো বিষয়টাই এখনও পর্যন্ত গবেষণাধীন। এপ্রসঙ্গে, তিনি ক্লোরোকুইনের কথা উল্লেখ করেছেন। করোনা আতঙ্কে ডাক্তারের অনুমতি ছাড়াই এই ওষুধ ব্যবহার করতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। মৃত্যুর খবরও আছে।
গোটা খবরটি ‘দ্য সান ’থেকে নেওয়া হয়েছে৷ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভিতেও এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ তবে, করোনা মারতে গিয়ে অবৈজ্ঞানিক ভাবে উকুন মারার ওষুধ আবার খেয়ে বসবেন না৷ তাতে বিপদ আরও বাড়বে৷ গবেষকদের গবেষণা করতে দিন৷ ভুল করেও এই নিয়ে আমপনি বাড়িতে গবেষণা করতে যাবেন না৷ কেননা, গুজব, ভুয়ো খবর যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে, তাতে এই সতর্কতা না দিলেই নয়৷