কলকাতা: কোনও সিনেমার গল্পের চেয়ে কম অদ্ভুত নয় এই বাস্তব। দু’ দু’বার হার্ট অ্যাটাক, খাদ্যনালীর ২৪০ সেন্টিমিটার বাদ, তারপরেও ৭২ ঘণ্টা যমে-মানুষে টানাটানি করে ‘মিরাকল’ ঘটিয়ে সুস্থ হল ১৪ বছরের মেয়ে পরিণীতা। প্রায় দুই মাস এসএসকেএম হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়ে অবশেষে সুস্থ হয়ে বলল, ‘বেঁচে আছি! নিজেরই কেমন অবাক লাগছে।’
দরিদ্র পরিবারের মেয়ে পরিণীতা। লকডাউনের মধ্যে বাড়ি থেকে কলকাতা যাতায়াত করতে করতে জমানো সব টাকাই প্রায় শেষ হয়েছে পরিবারের। পরিণীতা খুব সুন্দর গান গাইতে পারত। মৃত্যুকে জয় করে আবার তাই গান গাওয়ার স্বপ্ন দেখছে ছোট্ট মেয়েটি। শুক্রবার ছুটি পেতে চলেছে সে। ১২৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পিজি হাসপাতালের দুই চিকিৎসক নিজের গাড়ি করে পরিণীতাকে বাড়ি ছেড়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: উচ্চমাধ্যমিকে একই স্কুল থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়! তিন দৃষ্টিহীন পড়ুয়ার কৃতিত্বে উদ্বেল হলদিয়া
পরিণীতা’র অন্ত্রে জন্মগত হার্নিয়া (প্যারা ডুওডেনাল হার্নিয়া) ছিল। ফুসফুসের পাশে পচন ধরেছিল তা থেকেই। অসম্ভব পেটে যন্ত্রণা নিয়ে গত ৭ জুন সকালে এসএসকেএম হাসপাতালের ভিক্টোরিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় পরিণীতাকে। ঠিক হয়, পরদিন বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ অপারেশন করা হবে। তার মধ্যেই হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয় সে। টানা এক ঘণ্টা সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দেওয়ার পর তার হৃদপিণ্ড সচল হয়। তারপর শুরু হয় অপারেশন।
আরও পড়ুন: BIG BREAKING: তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে ছত্রধর, বহু নেতার পদ কেড়ে চমক মমতার
অন্ত্রের ডুওডেনামে’র পাশে মেসোকোলন অংশে জন্মগত হার্নিয়ার কারণে ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রায় আট ফুট ঢুকে, পচে গ্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছিল। সেই ২৪০ সেন্টিমিটার খাদ্যনালী কেটে বাদ দেওয়া হয় তার। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ফলে জমে থাকা প্রায় তিন লিটার পচন ধরা রক্ত বের করা হয়। অপারেশনের ফলে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ভেন্টিলেটরে থাকাকালীন সময়ে দ্বিতীয় বারের জন্য তার হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে। আবারও শুরু হয় যমে-মানুষে টানাটানি। সিপিআর দেওয়ার ৭২ ঘণ্টা পরে পরিণীতার হৃদযন্ত্র সচল হয়। জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে পারছিল না ছোট্ট মেয়েটি। অবশেষে কথা বলতে পেরে তার প্রথম অভিব্যক্তি, ‘বেঁচে আছি! নিজেরই ভাবতে কেমন অবাক লাগছে।’
চিকিৎসা চলাকালীন ১৬ ইউনিট রক্ত, প্লাজমা এবং ৫০ ইউনিট অ্যালবুমিন দেওয়া হয়েছে পরিণীতাকে। ১২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অক্লান্ত পরিশ্রমে এবং নিজের অসীম মনোবলের জন্যই ফিরেছে পরিণীতা, এমনটাই বলছে তার বাড়ির লোক। তাঁদের কথা অনুযায়ী, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ডাক্তারবাবুরা যা করেছেন, জীবনে ভোলার নয়।’ খাদ্যনালীর তিন ভাগের একভাগ, তথা ক্ষুদ্রান্ত্রের জেজুনামের সিংহভাগ বাদ যাওয়ার পরেও কীভাবে মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলা যায় এটাই ছিল চিকিৎসকদের কাছে বড় প্রশ্ন। এসএসকেএম-এর সার্জারি অধ্যাপক ডঃ বিতান চট্টোপাধ্যায় জানান, পরিণীতাকে হাসপাতাল থেকে ৩০ প্যাকেট এক বিশেষ টিপিএন খাদ্য দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, পরিণীতার সেরে ওঠার ঘটনা তাঁর সারা জীবনের অপারেশনগুলির মধ্যে অন্যতম।