সিদ্ধার্থ বোস: কলকাতার বিধান সরণির মাছুয়া বাজারের পাশেই আজও আছে সেই সরবতের দোকান। উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন প্রায় রোজই একটা সময় এই দোকানে সরবত খেতে খেতে আড্ডা দিতেন।
বাঙালির ঐতিহ্য কপিলা আশ্রম। বিবেকানন্দ রোড ধরে একটু এগোলেই বহু বছরের পুরনো ইট বেরনো এক বাড়ির নীচে চোখে পড়ে কপিলা আশ্রম। ১০০ বছরেরও বেশি বয়স এই দোকানটির। গঙ্গাসাগরের কপিল মুনির নামেই এই নামকরণ। এই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হৃষীকেশ শ্রীমানি। ভারতের স্বাধীনতারও আগে, ১৯০৭ সালে এই কপিল আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হৃষীকেশবাবু।
এই কপিল আশ্রমের পাশেই এক জায়গায় শিল্পীদের আনাগোনা ছিল সেই সময়ে। চর্চা হত বাংলা শিল্পকলা নিয়ে। সেখানে প্রায়ই যেতেন মহানায়ক উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন। কখনও কখনও সেখানে উপস্থিত থাকতেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে’র মতো বিশিষ্ট শিল্পীরা। বিরতির সময় কিংবা বাড়ি ফেরার সময় কখনই এই সরবতের স্বাদ নিতে ভুলতেন না ওঁরা।
হৃষীকেশ বাবু’র এই সরবতের নাম এক সময় গোটা কলকাতা চত্বরে ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি এই সরবত তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিজের হাতে তৈরি করতেন। ওই উপকরণের জোগাড় হৃষীকেশ বাবু পশ্চিমবঙ্গের বাইরের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আনাতেন। তারপর সেগুলি দিয়ে এবং নিজের হাতের জাদু মিশিয়ে সুস্বাদু সরবত তৈরি করতেন। সে সময়েও তিনি বিভিন্ন স্বাদের সরবত প্রস্তুত করতেন। তাঁর তৈরি সরবতের মধ্যে গোলাপ, ভ্যানিলা, জাফরান, এলাচ ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের ফ্লেভার উল্লেখযোগ্য ছিল।
তার মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু ও বিখ্যাত ছিল হৃষীকেশ বাবুর নিজের তৈরি ‘আবার খাই’ সরবত। যা পছন্দ করতেন উত্তম-সুচিত্রা। যে বাড়ির নীচে দোকানটি ছিল বর্তমানে তা ভেঙে পড়ায় একটি কাছাকাছি জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৪ জুলাই) ছিল বাঙালির চিরকালের মহানায়ক উত্তমকুমারের ৪০তম প্রয়াণ দিবস। করোনা আবহে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন অনেকেই।