কলকাতা: রাজ্য সহ গোটা দেশের করোনা পরিস্থিতি চরম উদ্বেগজনক৷ বাংলায় হু হু করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ৷ পরিস্থিতি বিবেচনা করে লকডাউনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন নবান্নের বৈঠকে তিনি বলেন, অগাস্ট মাসে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সেই সময়টা অবহেলা করা ঠিক হবে না৷ মুখে একথা বললেও, বাংলায় উৎসব উপলক্ষে বদলে ফেলা হচ্ছে সম্পূর্ণ লকডাউনের দিন৷ সংক্রমণকে পাশে সরিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উৎসবে৷
আরও পড়ুন- কেমন ছিল মমতার সঙ্গে রাজ্যপাল সম্পর্কের অতীত? বলছে বঙ্গ রাজনীতির ইতিহাস
বখরি ইদ, রাখী বন্ধন ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সম্পূর্ণ লকডাউনের দিন বদলে ফেলা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী যদিও বলেছেন লকডাউন চলায় উৎসবেও কোনও জমায়েত করা যাবে না৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তবে কি উৎসবে গুরুত্ব দিয়ে ভোট রাজনীতি করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী? অন্যদিকে, সংক্রমণের চেন ছিন্ন করতে টানা ৪৮ ঘণ্টা লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, উৎসবের ধাক্কায় ছেদ পড়েছে তাতে৷ ফলে এই এহেন লকডাউনের সিদ্ধান্ত কোভিড সংক্রমণ রুখতে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়৷
আরও পড়ুন- ৩ বছরে ব্রাত্য গেরুয়া মুকুল! দু’হাত বাড়িয়ে ঘাসফুল, সময়ে সমীকরণ বদল?
অন্যদিকে, হিন্দুত্বের ধ্বজা উড়িয়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী ৫ অগাস্ট রাম মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ রাম মন্দিরের ভূমিপূজায় উপস্থিত থাকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন এআইএমআইএম সুপ্রিমো আসাদুদ্দিন ওয়েইসি৷ তিনি বলেন, ”প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভূমিপূজায় অংশ নেওয়া মানে প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক শপথের শর্ত লঙ্ঘন করা। ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধানের মূল ভিত্তি। তাই প্রধানমন্ত্রীর জানানো উচিত, তিনি সেখানে ব্যক্তি হিসাবে যাচ্ছেন নাকি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে।” তবে নরেন্দ্র মোদীর অযোধ্যা সফরের পিছনেও যে ভোট রাজনীতি লুকিয়ে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য৷ রাম মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে আরও একবার উস্কে দিতে চাইছেন হিন্দু ভাবাবেগ৷
আরও পড়ুন- উৎসবে ছাড় দিয়ে বাংলায় ৯ দিন সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এদিকে, বাংলায় মুখ্যমন্ত্রীর এহেন খাপছাড়া লকডাউনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকার কী করছে, কী ভাবে চলছে, তার যুক্তি কী, বুদ্ধি কী, বিজ্ঞান কী, এটা কেউ জানে না৷ কে এই সরকার চালাচ্ছে বলুন তো? মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর গোটা দু’য়েক অফিসার আর তিন-চারজন হাফ দালাল৷’’ পশ্চিমবঙ্গে সরকারের বদলে সার্কাস চলছে বলেও কটাক্ষ করেন তিনি৷ সুজন চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘‘শনিবার ও রবিবার পর পর দু’দিন সম্পূর্ণ লকডাউন হওয়ার কথা৷ অথচ পরের সপ্তাহে সোমবার ও বুধবার লকডাউন৷ এটার মানে কী? এটার বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিই বা কী? এই যে এতদিন লকডাউন হল, সেই সময়ের মধ্যে যে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ ছিল, সেই প্রস্তুতি কি আমরা করতে পেরেছি? আজও বাংলার মানুষ ঠিকঠাক চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছে না৷ দেহ পর্যন্ত সৎকারের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না৷ মানুষের চিকিৎসা কী ভাবে হবে, সেদিকে প্রশাসনের কোনও লক্ষ্য নেই৷ তিনি এখন ব্যস্ত একুশে নির্বাচনের জন্য৷’’
আরও পড়ুন- কবে খুলবে স্কুল-কলেজ? বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, বাড়াল বন্ধের মেয়াদ
এই বাম নেতার কথায়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক মনোভাব নিয়ে কাজ করছে সরকার৷ ২১-এর নির্বাচনই তাঁদের পাখির চোখ৷ একই মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে দিল্লি৷ বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি নিয়ে তর্কবিতর্কের মধ্যে রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী হাজির হচ্ছেন৷ সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী রাজনীতির জন্য এই সময়টাকে ব্যবহার করছেন৷ আর মুখ্যমন্ত্রীও রাজনীতি করার জন্য এই সময়েরই সুযোগ নিচ্ছেন৷ আর ভুগতে হচ্ছে সাধারণ জনতাকে৷ তারা মরে মরুক৷ তাদের দিকে তাকানোর কোনও দরকার নেই৷ এটাকি সরকার চলানো হচ্ছে?’’