কলকাতা: গত বছর লোকসভা নির্বাচনে বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে লেখা হয়েছিল এক অন্য অধ্যায়৷ রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে জোড়া ফুল উপড়ে ফুটেছিল পদ্ম৷ সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল বিজেপি৷
আরও পড়ুন- মন্ত্রিত্ব, রাজ্যসভা এবং সারদা! ৩ কাঁটায় আটকে মুকুল-সাম্রাজ্য
নিজেদের সাফল্য সম্পর্কে আশাবাদী গেরুয়া শিবির এই জয়ের কৃতিত্ব দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তৎকালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে৷ কিন্তু আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ১০ মাস আগে বঙ্গ বিজেপি’তে ঘটে গিয়েছে একাধিক নেতৃত্বের উত্থান৷ সম্প্রতি রাজ্যে বিজেপি’র সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও বাংলা দখলের রূপরেখা তৈরি করতে দিল্লিতে বসেছিল গেরুয়া শিবিরের বৈঠক৷ ওই বৈঠকে যোগ দেওয়া বঙ্গ বিজেপি’র এক নেতার কথায়, ‘‘বাংলায় দলের নেতৃত্বে একাধিক ‘চাণক্য’ থাকতে পারে না৷ চাণক্য হবেন একজনই৷’’
আরও পড়ুন- পুলিশ-কর্তাদের সম্পত্তি হিসেব চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে টুইট রাজ্যপালের
সূত্রের খবর, বঙ্গ বিজেপি’র একটি অংশের মধ্যে রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে৷ অন্যদিকে রিপোর্ট বলছে, বিজেপি’র সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে মুকুল রায়ের৷ দিল্লির বৈঠক ছেড়ে তিনি আচমকা কলকাতায় ফেরার পর থেকেই শুরু হয়েছে তাঁর তৃণমূলে ফেরার জল্পনা৷ সম্প্রতি মুকুল রায়ের কিছু কথা ও কার্যকলাপ ঘিরে বিজেপি এবং তৃণমূল দু’পক্ষেই নতুন ভাবনার উদ্রেক হয়েছে৷
আরও পড়ুন- কেমন ছিল মমতার সঙ্গে রাজ্যপাল সম্পর্কের অতীত? বলছে বঙ্গ রাজনীতির ইতিহাস
একই দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও দীলিপ ঘোষ ও মুকুল রায়ের মধ্যে কোনও কালেই হৃদ্যতা ছিল না৷ মজার বিষয় হল, তৃণমূলের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত বিজেপি’তে যোগ দেওয়ার পরও লো-প্রোফাইল থেকেছেন৷ আবার লোকসভা ভোটের সময় মুকুল রায়ের রণকৌশলকে মান্যতা দেয়নি বিজেপি নেতৃত্ব৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘দলের ভিতরে মুকুল রায় এবং দিলীপ ঘোষের দুটি পৃথক লবি রয়েছে৷ যা বিভ্রান্তি এবং মাতানৈক্য তৈরি করছে৷ আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়োর সঙ্গেও মতানৈক্য রয়েছে দিলীপ ঘোষের৷ তিনি আবার একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী৷ ফলে যেখানে একসঙ্গে এতগুলো মাথা রয়েছে, সেখানে সমস্যা তৈরি হওয়াটাই তো স্বাভাবিক৷’’
আরও পড়ুন- ৩ বছরে ব্রাত্য গেরুয়া মুকুল! দু’হাত বাড়িয়ে ঘাসফুল, সময়ে সমীকরণ বদল?
জানা গিয়েছে, গত সোমবার দিল্লিতে দলের বৈঠকে দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং৷ তাঁর অভিযোগ, নিজেদের মতে দল চালাতে চাইছেন এই দুই নেতৃত্ব৷ অর্জুন সিংয়ের এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে ওঠেছিল দিল্লির বৈঠক৷ বঙ্গ বিজেপি’র অন্দরে এখন যে ব্যক্তি ক্ষমতা দখলের চোরা স্রোত বয়ে চলেছে, তাতে আখিরে হয়তো ভুগতে হবে দলকেই৷ বঙ্গ বিজেপি’তে যে একাধিক চাণক্যের উত্থান ঘটেছে, তা আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে দিল্লির বৈঠক৷