১২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বার প্রাণ বাঁচালেন ২ তরুণ সরকারি চিকিৎসক

অপূর্ব বলেছেন, ‘অপারেশনের পরের দুই রাত আমি আর শতাব্দী দুজনেই ঘুমাতে পারিনি। তারপর যখন খবর এল মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ, তখন যে অনুভূতি হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’

কলকাতা: হাসপাতালে সেদিন কেউ ছিলেন না। ১২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা রুবিনাকে নিয়ে তাঁর পরিবার ছুটে এসেছিলেন বেশ কয়েকটি নার্সিংহোম ও অন্য হাসপাতাল ঘুরে। বেড ছিল না, কিন্তু আরজি কর হাসপাতালে রেফার করলে নিয়ে যেতে যেতেই হয়তো মৃত্যু হত রুবিনার। ঝুঁকি নিলেন এক তরুণ চিকিৎসক। সঙ্গ দিলেন তরুণী অ্যানেস্থেটিস্ট। অভিজ্ঞতা খুবই কম, কিন্তু যুদ্ধে জিতে ফিরলেন তাঁরা, সুস্থ রুবিনা এবং তাঁর গর্ভস্থ সন্তান।

আরও পড়ুন: ৩ মাসে ৪ টাকা কমছে চালের দাম, তলানিতে জনতার চাল কেনার ক্ষমতা

বসিরহাটের মাটিয়া থানার অন্তর্গত আন্দুলপোঁতা গ্রামে রুবিনার শ্বশুরবাড়ি। ১২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা রুবিনার ৫ জুলাই থেকেই পেটে যন্ত্রণা ওঠে। ভ্রুণের পাশেই একটি টিউমার। এদিকে, করোনা রোগীদের জন্য কোনও হাসপাতালেই বেড পাওয়া যাচ্ছে না, অপারেশনে অহেতুক বিলম্ব হয়ে মারা যাচ্ছে রোগী। তেমন ভাবেই সারা দিন অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে রুবিনা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে কাহিল হয়ে পড়েছিল। অবশেষে দায়িত্ব নিলেন দুই চিকিৎসক। চিকিৎসক অপূর্ব পৈলানের অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতা মাত্র দেড় বছরের, অন্যদিকে অ্যানাস্থেটিস্ট শতাব্দী সরকারের অভিজ্ঞতা এক বছরের। দুজনেই স্নাতকোত্তর। পরিস্থিতি বুঝে অন্য কোথাও রেফার না করে রুবিনার প্রাণ বাঁচাতে বাধ্যতামূলক বন্ডে স্বাক্ষর করে ঝুঁকি নিলেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: ফের সাপ্তাহিক লকডাউনের দিন বদল, পাত্তা পেল না বিজেপি রাম-আর্জি

আট ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছিল। ইউএসজি-তে দেখা গিয়েছিল রুবিনার জরায়ুতে ১২ সপ্তাহের একটি ভ্রুণের সঙ্গে বাঁদিকে একটি ছোট বলের আকারের টিউমার রয়েছে। অ্যানাস্থেসিয়া করার পর পেটের জল বের করে প্রথমে টিউমার চুপসে ফেলা হয়, তারপর পেট কেটে সেটি বাইরে এনে ভ্রুণের থেকে আলাদা করা হয়।

অপূর্ব বলেছেন, ‘অপারেশনের পরের দুই রাত আমি আর শতাব্দী দুজনেই ঘুমাতে পারিনি। তারপর যখন খবর এল মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ, তখন যে অনুভূতি হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’ পুরষ্কার স্বরূপ রুবিনার বাড়ির লোক তাঁদের আশীর্বাদ করেছেন তাঁরা যেন আরও এগিয়ে যেতে পারেন। সঙ্গে নিজেদের খেতের সবজি এবং তিন কেজি রুই ও তিন কেজি বাগদা চিংড়ি উপহার দিয়েছেন। অপূর্বর কথায়, ‘এ যেন সিনেমা, বাস্তবে নিজের সঙ্গে ঘটবে বলে আশা করিনি। সারাজীবন মনে রাখব, ওঁদের উপহারের ছবি তুলে রেখেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − three =