রানাঘাট: এখনও সবটাই স্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে সরস্বতীর। রানাঘাট ব্লক ১ এর রামনগর ২ পঞ্চায়েতের রাঘবপুরের বাসিন্দা সরস্বতী সরকার। তাঁতশিল্পীর বাড়িতে জন্ম তাঁর। বাবা রামপদ বিশ্বাসের কাছেই তাঁতশিল্পে হাতেখড়ি তাঁর। অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি সরস্বতী, চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেই তাঁত বুনতে শুরু করেন তিনি। বিয়ের পরও এই শিল্পকে ধরে রেখেছেন সরস্বতী। ৩৫ বছর ধরে স্বামী রঞ্জিত সরকারের সঙ্গেই তাঁত বুনে চলেছেন তিনি। দীর্ঘ সাত মাস ধরে জামদানির ওপর এঁকেছিলেন জাতীয় পাখি ময়ূরের রঙিন নকশা। সম্ভবত রাজ্যের প্রথম মহিলা তাঁতশিল্পী হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন সরস্বতী সরকার।
ভালো কাজ শেখার খিদে চিরকাল ছিল সরস্বতীর, তাই জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শান্তিপুরের বিখ্যাত তাঁতশিল্পী বীরেন বসাকের কাছে জামদানি বোনার প্রশিক্ষণ নেওয়া। সাত মাস ধরে জামদানিতে ময়ূর, লতাপাতা ইত্যাদির নিখুঁত ছবি এঁকেছেন। বীরেনবাবুর চেষ্টায় সরস্বতীর শিল্প পৌঁছয় দিল্লি। সেখানে হাতেকলমে পরীক্ষা। এক সপ্তাহ আগে দিল্লি থেকে ফোন আসে সরস্বতীর কাছে। এবছর জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন তিনিই।
টাকা রোজগার করতে নেমে তাঁত বোনা যে তাঁর কখন ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে তা নিজেও বোঝেননি সরস্বতী। তাঁত বোনার পাশাপাশি সংসার সামলেছেন সমান দক্ষতায়। তাঁর ছেলে সিআরপিএফে চাকরি করেন। মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির অপেক্ষায় রয়েছেন। সরস্বতী দেবীর কথায়, ‘আমাদের মতো তাঁতশিল্পীদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। বীরেনবাবুর চেষ্টায় আমি এই কাজ করতে পেরেছি। এটা আমার কাছে ঈশ্বরপ্রাপ্তির সমান।’
সরস্বতী আরও জানিয়েছেন, এরপর তাঁর গ্রামের মেয়েরাও কাজে এগিয়ে আসার অনুপ্রেরণা পাবেন। যদিও শংসাপত্র পেলেও কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গেছে সরস্বতীর। গত শুক্রবার জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবস ছিল। সেইদিনই আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার জন্য অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় এমনিই শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয় সরস্বতীর হাতে। ফলে বিবর্ণ জীবনে জৌলুসের তৃপ্তি উপভোগ করতে পারেননি সরস্বতী। তবুও এ পুরস্কার এখন তাঁর পরিচিতি।