কলকাতা: ফের বদলে গেল বাংলার পূর্ণ লকডাউনের ক্যালেন্ডার৷ চতুর্থ দফায় বাংলায় সম্পূর্ণ সাপ্তাহিক লকডাউনের দিন বদল করে জারি হয়েছে বিজ্ঞপ্তি৷ লকডাউনের দিনবদলের পিছনে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক কারণ লুকিয়ে আছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি৷ নিজের মর্জি মতো সরকার চলছে? প্রশ্ন বামেদের৷
বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, আগামী ২৮ আগস্ট বাংলা সম্পূর্ণ লকডাউন হবে না৷ তবে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সাপ্তাহিক লকডাউন কার্যকর থাকবে৷ কিন্তু হঠাৎ কেন এই রদবদল? জাবাব দিয়েছে রাজ্য৷
নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২৮ তারিখ লকডাউন হলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বিঘ্নিত হতে পারে৷ আর সেই আশংকা থেকেই দিন বদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ আগামী ২৮ তারিখ লকডাউন থাকলে টানা পাঁচদিন ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ থাকবে৷ আর সেই কারণে ব্যাংকিং ক্ষেত্রে যুক্ত কিছু মানুষের আপত্তির কথা বিবেচনা করে ২৮ তারিখ লকডাউন হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ আর সেই কারণে আপাতত ২০,২১, ২৭ ও ৩১ আগস্ট রাজ্যে সম্পূর্ণ লকডাউনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে৷
যদিও এর আগে বিধি ধর্মীয় উৎসবের কারণে একাধিকবার লকডাউনের দিন পরিবর্তন করা হয়েছে৷ বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসেও লকডাউন হয়েছে বাংলায়৷ রামমন্দিরের ভূমি পুজোর দিন লকডাউন প্রত্যাহারের দাবি উঠলেও তা সরকারি ভাবে মান্যতা মেলেনি৷ বিজ্ঞপ্তি জারি করে আগস্টে ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ এবার তা কমিয়ে ৬ দিন করা হয়৷ রাজ্যের ঘোষণা ঘিরে রাজনীতির ময়দানে নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷
লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কি হচ্ছে, সেটা ট্র্যাক করা প্রয়োজন৷ কারণ পশ্চিমবঙ্গে তুঘলকি শাসন চলছে৷ এটা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষ্যাপামি চলছে৷ এক একটা দিন যাচ্ছে, আর এক এক রকমের সিদ্ধান্ত৷ পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষকে সরকার গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করছে৷ আজ বলছে, লকডাউনে হবে৷ কাল বলছিল হবে না৷ কী চলছে বাংলার মানুষের সঙ্গে? একটা পরিকল্প করে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত৷ এটা কি লকডাউন হচ্ছে? এর মানেটা কী? মৃতের সংখ্যা কমছে না, সংক্রমণ কমছে না৷ চিকিৎসকরা মারা যাচ্ছেন৷ স্বাস্থকর্মীদের মৃত্যু হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলি রোগীদের থেকে টাকা লুট করছে৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলি কসাইখানায় পরিণত হয়েছে৷ কী চলছে এসব? নৈরাজ্যের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে৷ প্রশাসনিক প্রশাসনিক খ্যাপামির কারণে বাংলায় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ জানিনা আগামী দিনে কী হবে৷ কিন্তু বাংলায় যা হচ্ছে তাতে নৈরাজ্যের আরেকটি বিবরণ বলে মনে হচ্ছে৷’’
বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা নয়া লকডাউনের দিন ঘোষণা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘এর পিছনে ২টি কারণ রয়েছে৷ একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও সাম্প্রদায়িক ইস্যু৷ প্রথম কারণ হচ্ছে ২৮ তারিখ তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস৷ অতএব নিজেদের ছাত্রদের প্রতিষ্ঠা দিবসে লকডাউন তুলে নিল সরকার৷ দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ২৯ তারিখ মহরম৷ মহরমের আগের দিন কীভাবে বাংলায় লকডাউন হবে? তাহলে ভোটের সুড়সুড়ি কীভাবে দেবে? সেই কারণের জন্য রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক দিক দিয়ে এই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ এই সরকার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িকতা ভোলেনি৷ একটা অযোগ্য সরকার না হলে ছয়বার দিন বদল করতে হয়? একটা লকডাউন করার ক্ষমতা রাখে না যে সরকার, তা করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে কী লড়বে?’’
তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ বলেন, ‘‘আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, এরকম প্রহসন, প্রতারণা করার অধিকার মানুষের সঙ্গে কারোর নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী বুঝবেন, তাঁর চেয়ারের মূল্য আছে৷ তিনি তাঁর অবস্থানকে ছোট করছেন৷ যুক্তি নেই, বিবেচনা নেই, কোন কিছু নেই, শুধু খুশিমতো পরিবর্তন৷ নিজে বসে থেকে ১০ দিন লকডাউন ঘোষণা করলেন৷ পরে তা কমে হল ৯ দিন৷ এখন হচ্ছে ৭ দিন৷ তারপর কমে হল ৬ দিন৷ এটা কি ছ্যাবলামি হচ্ছে? পরপর দিনবদল৷ এত ছোঁদো যুক্তি? মানুষকে আপনারা এত নির্বোধ ভাবেন? পশ্চিমবঙ্গ মানুষের কোনও মর্যাদা নেই? মানুষ আজ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে৷ আপনারা বলুন ২৮ তারিখে অন্য কোনও কর্মসূচি আছে৷ কেন মুখ্যমন্ত্রী বারে বারে এই ধরনের কাজ করছেন? কোন পরিকল্পনা ছাড়া এই ধরনের কাজ সমর্থন করা যায় না৷’’
বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় জানিয়েছেন, ‘‘২৮ তারিখ লকডাউন হলে পরপর বেশ কয়েকদিন ব্যাংক বন্ধ হয়ে যেত৷ তাতে সমস্যা হত সাধারণ মানুষের৷ এই জন্য ২৮ তারিখ সম্ভবত সরকার দিন পরিবর্তন করেছে এবং সরকার তার ব্যাখ্যা দিয়েছে৷ আমি বিরোধীদের বলছি, আপনারা সবকিছুর মধ্যে নিজেদের ক্ষুদ্র রাজনীতির ব্যবহার করবেন না৷ এই করোনা আবহে তাঁদের আরেকটু গঠনমূলক চিন্তা নিয়ে বক্তব্য রাখা উচিত এবং কাজ করা উচিত৷’’