লকডাউনে ক্লাস নিয়ে কেঁদে ফেললেন ‘হেনস্থা’র শিকার হওয়া প্রধান শিক্ষক!

লকডাউনে ক্লাস নিয়ে কেঁদে ফেললেন ‘হেনস্থা’র শিকার হওয়া প্রধান শিক্ষক!

 

ঘাটাল: লকডাউনে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল৷  করোনা আবহে কবে থেকে ফের ক্লাস শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত৷ কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় বহু ছাত্রছাত্রীরই পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে৷ বাকিদের থেকে তারা পিছিয়ে পড়ছে৷ কারণ মোবাইল ফোন কিনে অনলাইন পড়াশোনা করার সামর্থ্য সকলের নেই৷ তাই স্কুল খুলে ক্লাস নেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন হাট সরবেড়িয়া ডা. বিধানচন্দ্র রায় স্মৃতি শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন ঘটক৷ এর জেরেই প্রশাসনের কাছে নাস্তানাবুদ হতে হল তাঁকে৷ দিনভর চলল হয়রানি৷   

আরও পড়ুন- ওসি’র নাকি করোনা, গুজবে মাছি তাড়াচ্ছে থানা! রাতারাতি উধাও থানায় ভিড়

লকডাউনের মধ্যে ১২ অগাস্ট কিছু পড়ুয়াকে নিয়ে ক্লাস করানোর ব্যবস্থা করেছিলেন প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন ঘটক৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস নেওয়া হয়৷ কিন্তু এই খবর জানাজানি হতেই পর্যায়ক্রমে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে নানা ভাবে চাপ আসতে থাকে তাঁর উপর৷ সংবাদমাধ্যমের সামনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কেঁদেও ফেলেন তিনি৷ অনেকেরই অভিযোগ, প্রচারের আলোয় আসার জন্য এই বাড়াবাড়ি করেছেন প্রধান শিক্ষক৷ তবে ঘাটাল মহকুমার অধিকাংশ মানুষই প্রধান শিক্ষককে সমর্থন জানিয়েছেন৷ অভিনন্দন জানিয়েছেন তাঁর এই উদ্যোগকে৷ কুর্নিশ জানিয়েছেন ছাত্রদরদী প্রধান শিক্ষক, পার্শ্বশিক্ষক-শিক্ষিকা ও পরিচালন কমিটিকে৷ কিন্তু সরকারি নির্দেশ বড় বালাই৷ তাই প্রশাসনের চাপে বৃহস্পতিবার থেকে ফের বন্ধ হয়ে যায় ক্লাস৷ 

আরও পড়ুন- ‘চোখের খিদে মেটাতে হট ছবি পাঠাও’! বাম নেতার কুকীর্তির পর্দাফাঁস তিন তরুণীর

 

প্রধান শিক্ষক জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই দশম শ্রেণির কিছু ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক ক্লাস নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছিলেন৷ তাদের হাতে স্মার্টফোন না থাকায় লকডাউনে তারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে৷ বাড়িতে এককভাবে টিউশন দেওয়ার ক্ষমতাও নেই৷ এদিকে, সরকারি নির্দেশিকার জেরে এখন শিক্ষকরাও এখন স্কুলে আসছেন৷ অথচ স্টাফরুমে বসেই সময় কাটাতে হচ্ছে তাঁদের৷ তাই ওই অভিভাবকদের অনুরোধ রাখার জন্য ক্লাস নেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়৷ ১২ অগাস্ট সমস্ত ব্যবস্থা করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পিছিয়ে পড়া ৩০-৪০ জন ছাত্রীকে নিয়ে ক্লাস করানো হয়৷ ঘণ্টা খানেক তারা ক্লাস করে নিজেদের সমস্যাগুলি শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নেয়৷ এরই মধ্যে এই খবরটি চাউর হয়ে যায়৷ প্রশাসনের তরফে ফোন আসতে শুরু করে৷ বলা হয়, এই ভাবে ক্লাস নেওয়া যাবে না৷ এর পরেই পড়ুয়া ও অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, আর ক্লাস নেওয়া হবে না৷ এই ঘটনায় হতাশ অভিভাবক ও পড়ুয়ারা৷

আরও পড়ুন- কোভিড যোদ্ধার মৃত্যু হলে পরিবারের সদস্যকে চাকরির সিদ্ধান্ত রাজ্যের

 

তিনি বলেন, ‘‘এই কাজের মধ্যে কোনও ভুল দেখতে পাইনি৷  কিন্তু ক্লাস নেওয়ার জন্য যেহেতু সরকারের কোনও নির্দেশিকা নেই, প্রশাসনিক আধিকারিকরা তা স্মরণ করানোর পরই ভুল স্বীকার করে নিয়েছি৷’’

বৃন্দাবন ঘটক বলেন, ‘‘আমি ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে এই কাজ করেছি৷ কিন্তু সরকারের তরফে যদি শো-কজ করা হয় বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে তা মাথা পেতে নেব৷’’ তবে তাঁর একটাই অনুরোধ, ৩১ বছর ধরে শিক্ষকতা করার পর এইভাবে তাঁকে যেন হেনস্থা করা না হয়৷ ১৯৮৯ সাল থেকে এই স্কুলে কর্মরত রয়েছেন তিনি৷ মাটির ঘর থেকে আজ ইটের ইমারত তৈরি করেছেন৷ হোস্টেল তৈরি করা হয়েছে৷ মাল্টিপারপাস হল তৈরি হচ্ছে৷ এর পরেও তাঁকে যে ভাবে প্রশাসনের চোখরাঙানি সহ্য করতে হয়েছে তা কাম্য নয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *