বিদ্যাসাগরের পর রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বভারতীতে বুলডোজার-তাণ্ডব! নেপথ্যে তৃণমূল?

বিদ্যাসাগরের পর রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বভারতীতে বুলডোজার-তাণ্ডব! নেপথ্যে তৃণমূল?

বোলপুর: বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙারভাংচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলা৷ সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে রাজপথ কাঁপিয়ে ছিল শাসকদল তৃণমূল৷ কিন্তু সেই বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসে গত ২৯ জুলাই গোটা বাংলা জারি ছিল লকডাউন৷ বিদ্যাসাগরকে নিয়ে বঙ্গ রাজনীতির ভোটের ময়দান উত্তপ্ত হওয়ার পর এবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীতে তাণ্ডব চালানো একদল উন্মত্ত জনতা৷ বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তোরণ৷ তছনছ খেলার মাঠে বিশ্বভারতীর অস্থায়ী অফিস৷ রীতিমতো মিছিল করে চলল বেপরোয়া তাণ্ডবলীনা রবি ঠাকুরের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে৷ গোটা ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অংশগ্রহণ ঘিরে নতুন করে তৈরি হয়েছে জল্পনা৷

শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল অশান্তি৷ শনিবার খেলার মাঠে পাঁচিল তোলাকে কেন্দ্র করে ঠিকাদার সংস্থাকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয়দের একাংশে বিরুদ্ধে৷ পরে রবিবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পাঁচিল নির্মাণের কাজ শুরু করেন৷ কিন্তু দেওয়া তোলার কাজে গতি আসতে না আসতেই এবার করোনা আবহে দূরত্ববিধি লাটে তুলে রীতিমতো হাজার খানেক মানুষের মিছিল, বিশ্বভারতীতে তাণ্ডবের লজ্জা দেখল গোটা বাংলা৷ তাণ্ডব মিছিলে অংশ নিলেন দুবরাজপুরের তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউড়ি থেকে শুরু করে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব৷ যদিও তাণ্ডব মিছিলে ছিল না দলীয় পতাকা৷ কিন্তু, তাতে তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতি ঘিরে নতুন করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷ যদিও গোটা ঘটনায় পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পাননি স্থানীয় বাসিন্দার৷

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ গত বেশ কিছুদিন ধরে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে৷ সেই কাজে অপত্তি জানিয়ে মেলারমাঠ বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে বোলপুরের ফায়ার ব্রিগেড অফিসের সামনে জমায়েত করা হয়৷ আজ মিছিল করে এসে পাঁচিল তৈরির কাজে বাঁধা দেওয়া হয়৷ শুধু বাঁধা দেওয়া নয়, বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তোরণ৷ তছনছ খেলার মাঠে বিশ্বভারতীর অস্থায়ী অফিস৷ কোনওভাবেই তারা পাঁচিল তুলতে দেবে না বলে মেলার মাঠে কর্তৃপক্ষের অস্থায়ী অফিস ভাঙচুর করা হয়৷ পাঁচিল ভাঙা হয়৷ ভাঙা হয় গেট৷ লন্ডভন্ড করা হয় অস্থায়ী অফিস৷ বুলডোজার দিয়ে চালানো হয় তাণ্ডব৷ করোনা দূরত্ববিধি লাটে তুলে মেলারমাঠ বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে করা বিশাল মিছিলে পা মেলান দুবরাজপুরের তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউড়ি থেকে শুরু করে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব৷ যদিও তাণ্ডব মিছিলে ছিল না দলীয় পতাকা৷ তৃণমূল নেতাদের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই৷ তাঁরা আজ মেলারমাঠ বাঁচাতে এসেছেন৷ কারণ, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের স্বার্থের জন্য তাঁরা আজ এই মিছিলে অংশ নিয়েছেন৷ কিন্তু, মেলার মাঠ বাঁচাতে গিয়ে তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতে তাণ্ডবের ঘটনা কি আদৌও সমর্থন যোগ্য? নতুন করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷ গোটা ঘটনায় তৃণমূল বিধায়কের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷
 

অন্যদিকে, পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৪টি মামলা রুজু হয়েছে৷ বিশ্বভারতীর ঠিকাদারকে মারধর করার অভিযোগ তুলে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে অভিযোগ৷ একইভাবে মহিলা আশ্রমিককে হেনস্থার ঘটনায় বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ এছাড়া, করোনা আবহে জমায়েত করায় দায়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে অভিযোগ৷ রাস্তা বন্ধ করে স্থানীয়দের হেনস্থা করার ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃবপক্ষের বিরুদ্ধে৷ বিশ্বভারতীর ব্যরিকেডগুলি ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ৷

কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, পাঁচিল তোলা বা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি থাকতেই পারে, কিন্তু তাই বলে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান মধ্যে বুলডোজার নিয়ে এভাবে তাণ্ডবলীলা চালানোর কি মানে? আদতে কি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানকে আরও বাড়াল? নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অবমাননা করলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সংগঠনের একাংশ?
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাকে কেন্দ্র করে গোটা বাংলায় যে লজ্জার তাণ্ডবলীলা দেখেছিল, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বুলডোজার নিয়ে ভাঙচুর, তাণ্ডব কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল? প্রশ্ন তুলছেন রবি অনুরাগীদের একাংশ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + 2 =