কলকাতা: অতিমারির জেরে বদলে গিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন চিত্র, তাতে সন্দেহ নেই। বদলাচ্ছে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী, খাদ্যাভ্যাস এবং ওষুধপথ্যেও এসেছে বদলের ছোঁয়া। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় আর কিছু না হোক, মাস্ক নিতে ভুলছে না কেউই। রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময়েও মাথার মধ্যে কাজ করছে সতর্কতা। এই সময়ে দাঁড়িয়ে উপহার সামগ্রীতেও আসছে বদল। প্রিয় মানুষের জন্মদিনে, কিংবা অন্য যে কোনও কারণে উপহারের তালিকায় ফুল, চকোলেট, বই আর থাকছে না। সেই জায়গা দখল করেছে স্যাটিটাইজার, মাস্ক, পাল্স অক্সিমিটার।
হ্যাঁ, মাসপাঁচেক আগেও এসব দ্রব্য উপহার হিসেবে দেওয়ার কথা কারও ভাবনাতেও আসত না। কিন্তু এক ভাইরাস জনজীবনে এমনই প্রভাব ফেলেছে যে এখন মাস্ক-স্যানিটাইজারই প্রধান উপহার্য হয়ে উঠেছে। অতিমারির পরিস্থিতিতে এই জিনিসগুলোই সবথেকে বেশি ব্যবহার করছে সবাই। তাই একে অপরকে উপহার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে কোভিড-১৯ রোগের সঙ্গে লড়ার অস্ত্রই। বরাবরের ফুল, চকোলেট এখন বাতিলের খাতায়।
৭৫ বছর বয়সি শ্বশুরের জন্মদিনে একটি পাল্স অক্সিমিটার উপহার দিলেন তাঁর জামাই গিরিশ বাসান্দানি। কলকাতা স্থিত ব্যবসায়ী গিরিশ বলছেন, ‘আমার মনে হয়েছে এটা প্রয়োজনীয় উপহার। আর একটা কারণ, ভয়ের চোটে মানুষ এই পাল্স অক্সিমিটার কিনে নিচ্ছে ফলে বাজারে খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। ফুরিইয়ে যাওয়ার আগেই তাই কিনে ফেললাম।’ গিরিশ এও জানিয়েছেন, ‘এই উপহার দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর শ্বশুরের কোভিড-১৯ ধরা পড়ে। শ্বাসগ্রহণে সমস্যা হওয়ায় এই অক্সিমিটার যন্ত্রেই তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাত্রা মেপে দেখা হয়। সে কারণেই তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া গেছিল এবং সুস্থ হয়ে তিনি বাড়িও ফিরেছেন।’
এমন ঘটনা শহরজুড়ে আরও অনেক। ভাইয়ের জন্মদিন উপলক্ষে সিমরন চোপড়া এবং তাঁর বোন গোটা পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে রঙবেরঙের মাস্ক উপহার দেন। লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা সিমরনের কথায়, ‘দেখুন, মাস্ক এখন বাধ্যতামূলক এবং সবারই পরা উচিত। তাই আমাদের মনে হল, পরিবারের সবাইকে সুন্দর সুন্দর মাস্কই উপহার দেওয়া হোক।’ বলা বাহুল্য, এই ধরনের উপহার পেয়ে উপকৃতই হওয়ার কথা। ফুল-চকোলেট তাই এখন অতীত, উপহারের ট্রেন্ড এখন মাস্ক-স্যানিটাইজার।