বিশ্বভারতী-তাণ্ডব: শাস্তির কোপে ৪ পুলিশকর্মী, ‘রাজায়-রাজায় যুদ্ধে’র জের?

বিশ্বভারতী-তাণ্ডব: শাস্তির কোপে ৪ পুলিশকর্মী, ‘রাজায়-রাজায় যুদ্ধে’র জের?

 

বোলপুর: প্রবাদ আছে, ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়’! এবার বাংলার বহুল প্রচারিত সেই প্রবাদ ফিরে এল রবি ঠাকুরের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করে৷ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে লজ্জার তাণ্ডবের পর ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৪ পুলিশ কনস্টেবলকে ক্লোজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন৷ পুলিশের অজ্ঞাতে অন্য কাজে তাঁদের ব্যবহার করা হয়েছে বলে তোলা হয়েছে অভিযোগ৷ উপাচার্যের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর কাজেও তাঁদের অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ অন্যদিকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দেহরক্ষী নিয়োগ ঘিরেও তৈরি হয়েছে জটিলতা৷ নতুন ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ইতিমধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছেন উপাচার্য৷ আর তার জেরেই নতুন করে সংঘাত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷

জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ৪ জন পুলিশকর্মী৷ ওই চার পুলিশ কনস্টেবল ক্লোজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন৷ সূত্রের খবর, তাঁদের দায়িত্ব ছিল ক্যাম্পাসের দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ অভিযোগ, নিজের দায়িত্ব পালন না করে অন্যান্য কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁরা৷

পুলিশের দাবি, তাঁদের অপব্যবহার করা হয়েছে৷ ওই চার পুলিশ কনস্টেবলকে শান্তিনিকেতনের বাইরে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে৷ এমনকি উপাচার্যের নেতৃত্বে রবিবার পাঁচিল তৈরি পক্ষে মিছিলে ওই কনস্টেবলদের ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে৷ তাণ্ডবের ঘটনার সময় তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করেনি বলেও উঠেছে অভিযোগ৷ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করার জেরে তাঁদের ক্লোজ করে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্লোজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে৷

অন্যদিকে, গতকাল রাজ্যপাল টুইট করে জানিয়েছিলেন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী আচমকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যপাল টুইটারে মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে লিখেছিলেন অবিলম্বে যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়৷ এরপর রাজ্য প্রশাসনের তরফে এই সিদ্ধান্ত বলে সূত্রের খবর৷

ওই চার পুলিশ কনস্টেবল ক্লোজ করার পাশাপাশি উপাচার্যের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীকে বদলে অন্য দেহরক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে৷ অভিযোগ উঠছে, উপাচার্য তাঁর দেহরক্ষীদের অন্য কাজে ব্যবহার করতেন৷ যদিও এই বিষয়ে উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ সূত্রের খবর, উপাচার্যের দেহরক্ষীর মধ্যে একজন দেহরক্ষীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ পরিবর্তে অন্য একজনকে নিয়োগ করা হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, উপাচার্য সেই দেহরক্ষী প্রত্যাখ্যান করেছেন৷

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তাণ্ডবের দিন করোনা দূরত্ব লাটে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া তথা তৃণমূল বিধায়কের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল, জমায়েত, পরে তাণ্ডব, বুলডোজার আনিয়ে লজ্জার তাণ্ডব সামাল দিতে ৪ জন পুলিশ কর্মী কি যথেষ্ট? বিশাল জনতার সামনে ৪ জন পুলিশ কর্মী কীভাবে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন৷ যদিও গোটা ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতিমধ্যেই পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ৷ রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বিশ্বভারতীর এই সংঘাতের আবহে সাধারণ ৪ পুলিশ কনস্টেবলকে ক্লোজ করার সিদ্ধান্ত ঘিরে নতুন করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + fifteen =