বাড়ি বসে থাকলে সংসার চলবে? ফের ভিন রাজ্যে ফিরতে চান MA পাস বাংলার শ্রমিক

লকডাউনে পায়ে হেঁটে, ট্রেনে চেপে তুমুল ঝড় ঝাপটা সামলে নিজ রাজ্যে ফিরে গিয়েছিলেন পুরুলিয়ার এই খেটে খাওয়া মানুষগুলি। প্রশাসনের দেওয়া নামে আজ তারা পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবেই পরিচিত। মহামারীর এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেউ এদের পাশে দাঁড়ায়নি। লকডাউনের দীর্ঘ ৪ মাস তাদের এক কথায় অনাহারেই থাকতে হয়েছে। তাই আবার কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে চান তারা।

 

পুরুলিয়া: লকডাউনে পায়ে হেঁটে, ট্রেনে চেপে তুমুল ঝড় ঝাপটা সামলে নিজ রাজ্যে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন পুরুলিয়ার এই খেটে খাওয়া মানুষগুলি৷  প্রশাসনের দেওয়া নামে আজ তারা পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে পরিচিত৷ মহামারীর এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেউ এদের পাশে দাঁড়ায়নি। লকডাউনের দীর্ঘ ৪ মাস তাঁদের এক কথায় অনাহারেই থাকতে হয়েছে। তাই আবার কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে চাইছেন তাঁরা।

এদের কারও নাম কার্তিক, কারও হীরক কিংবা কারও নাম তাপস অথবা মৃত্যুঞ্জয়। কাজের সন্ধানে নিজের ভিটে ছেড়ে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে অন্য রাজ্যে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু করোনার জন্য লকডাউন ঘোষণার পড়ে তাদের ভাগ্যে নেমে আসে অন্ধকার। হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণার ফলে তাদের বেশিরভাগকেই পায়ে হেঁটে কিংবা গাড়ি ভাড়া করে ফিরতে হয়েছে নিজ রাজ্যে। সরকার তাদের জন্য 'করোনা স্পেশাল' নাম দিয়ে ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু নিজ রাজ্যে ফিরে তাদের পড়তে হয় অন্য এক বিপদে। কাজের সন্ধানে এদের অনেকেই স্থানীয় সাংসদ, বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাঁদের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি৷ এদিকে এই শ্রমিকেরা কীভাবে সংসার চালাবে তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এক বিধায়ক তো এমনও বলেছিলেন যে, তারা তো রোজগার করে তাঁকে দিতে যায় না, ফলে ওই শ্রমিকেরা কীভাবে ফিরবে সেটা দেখার দায়িত্ব তাঁর নয়।

পরিযায়ী শ্রমিকদের ফুড কুপন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের শাসক দলে নেতাদের দুর্নীতি সামনে এসেছে। দেখা গিয়েছে গরীব মানুষগুলির নাম সেখান থেকে বাদ দিয়ে দলের ঘনিষ্ঠ লোকেদের সেই কুপন দেওয়া হয়েছে। কোথাও আবার চাল পাওয়া গেলেও ছোলা পাওয়া যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, ওই সমস্ত কর্মীদের শহরেই কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তার জন্যে কয়েকটি প্রকল্পের নামকরণ পর্যন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন ঘটেনি বলে অভিযোগ তুলছেন শ্রমিকদের একাংশ৷

জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে ঘরে ফেরা এই সমস্ত কর্মীদের একত্রিত করে সিআইটিইউ আন্দোলন শুরু করেছে। সিআইটিইউ নেতা মহম্মদ ইব্রাহিমে'র বক্তব্য, বরাবাজার এলাকার নয়টি ব্লকের কর্মীদের কাজের আবেদন জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত প্রশাসন তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একই মত প্রকাশ করেছেন সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়। তিনি জানিয়েছেন, একাধিক বার লিখিত ভাবে জেলা শাসককে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বললেও প্রশাসন এখনও নির্বিকার।

পুরুলিয়া জেলার জঙ্গলমহল অঞ্চলের চিরুডি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শ্যামললেওয়া গ্রামের বাসিন্দা জগবন্ধু দু’বছর আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন৷ ইচ্ছা ছিল ইতিহাসের শিক্ষক হওয়ার, কিন্তু অভাবের সংসার চালাতে নিজ রাজ্য ছেড়ে মহারাষ্ট্রে চলে যেতে বাধ্য হন কাজের সন্ধানে। সেখানে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ পেয়েছিলেন। প্রশাসনের থেকে কোনও রকম সাহায্য না পেয়ে তিনি ও তাঁর মতো অনেকেই আবার ফিরে যেতে চাইছেন ভিন রাজ্যে। পুরুলিয়ার বেশির ভাগ কর্মীরাই ভিন জেলায় গিয়ে কাজ করেন। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর মহকুমা অঞ্চলে যে শিল্পায়নের কাজ শুরু হয়েছিল তা সরকারের পালা বদলের পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওই জেলার যুবক যুবতিদের স্বপ্নও ভেঙে গেছে। তাই ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধান করাই এখন একমাত্র গতি তাদের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =