শান্তিনিকেতনে প্রতিবাদ এবিভিপির! সমর্থন পেতে সেই রবি-আবেগই হাতিয়ার

বলা বাহুল্য, বসন্ত উৎসব এবং পৌষ মেলার সময় বিপুল পরিমাণ ব্যবসা চলে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেতন এলাকায়। সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাক চায় না তৃণমূল। ১৭ আগস্ট গোলমালের ঘটনায় যথেষ্ট মুখ পুড়েছে তাদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার সেই জায়গা দখল করার প্রচেষ্টায় বিজেপি।

শান্তিনিকেতন: রবি ঠাকুরের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনে বেপরোয়া তাণ্ডব দেখেছে গোটা বাংলা৷ পে লোডার আনিয়ে ভাঙচুর, ভাঙচুর পরবর্তী রাজনীতিতে তপ্ত রাজনীতির ময়দান৷ রবি-আবেগকে কাজে লাগিয়ে এবার একই ইস্যুতে মাঠে নামল গেরুয়া শিবির৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পৌষ মেলা বন্ধ না করার দাবি জানিয়ে তৃণমূলের লাইনে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি৷ ‘পৌষ মেলা বন্ধ হতে দিচ্ছি না’, স্লোগান তুলে সরব গেরুয়া শিবির৷ যদিও এই একই ইস্যুতে আগেই সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল৷ তারাও চাইছে, শান্তিনিকেতনে হোক পৌষ মেলা৷ কিন্তু, নারাজ বিশ্বভারতী৷ নীতিগত ভাবে ভিন্ন মেরুতে থাকা বাংলার যুযুধান দুই রাজনৈতিক দলের একই ইস্যুতে পথে নামাকে কেন্দ্র করে নতুন করে তপ্ত বাংলার রাজনীতি

১৭ আগস্ট অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছিল ঐতিহ্যশালী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্বপল্লির মাঠ যা মেলার মাঠ নামে সুপরিচিত তা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচিল নির্মাণের কাজ। কিন্তু ১৭ তারিখ তৃণমূল নেতা নরেশ বাউড়ির নেতৃত্বে শয়ে শয়ে মানুষ এসে মাঠ ঘিরে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। পে লোডার নিয়ে এসে ভেঙে দেওয়া হয় রতনপল্লি এলাকা সংলগ্ন বিশ্বভারতীর পাঁচিল। বিকেলের মধ্যেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। সেদিনই তৃণমূলের বিরুদ্ধে এলাকা দখলের অভিযোগ এনেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আজ, ২৪ আগস্ট সেই ভাঙচুরের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করল গেরুয়া শিবিরের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। 

অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের প্রতিবাদে সেই তৃণমূলের সুরই শোনা গেল। তৃণমূলের বিক্ষোভে রবীন্দ্রনাথ, বাঙালিয়ানা এই সমস্ত সেন্টিমেন্টকে হাতিয়ার করা হয়েছিল। এবিভিপির প্রতিবাদেও সেই একই সুর। বিভিন্ন ঝামেলার কারণে বসন্ত উৎসব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্বভারতী। তার প্রতিবাদ করতে দেখা যায় তৃণমূলকে। আজ কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমর্থনে কথা বললেও বসন্ত উৎসব বাতিলের বিরুদ্ধে পোস্টার নিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেল এবিভিপির সদস্যদের। 

বলা বাহুল্য, বসন্ত উৎসব এবং পৌষ মেলার সময় বিপুল পরিমাণ ব্যবসা চলে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেতন এলাকায়। সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাক চায় না তৃণমূল। ১৭ আগস্ট গোলমালের ঘটনায় যথেষ্ট মুখ পুড়েছে তাদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার সেই জায়গা দখল করার প্রচেষ্টায় বিজেপি। তাই রবীন্দ্রনাথ এবং বাঙালি সেন্টিমেন্টকেই হাতিয়ার করেছে তারা। গেরুয়া শিবির জানে, শান্তিনিকেতন চত্বরের দখল নিতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা এবং আশ্রমিকদের সমর্থন সবচেয়ে জরুরি। তা পেতে গেলে ওই ভাবাবেগকেই কাজে লাগাতে হবে। তাই দেরি না করে কাজে নেমে পড়েছে তারা। এর আগেও গাছ কাটার ঘটনায় আশ্রমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের চক্ষুশূল হয়েছিল তৃণমূল। এদিকে বিজেপির সমস্যা তাদের অবাঙালি ভাবমূর্তি। তাই সেটাকেই আগে ঝেড়েপুছে নিতে চাইছে তারা, দাবি বিশেষজ্ঞদের। নীতি পৃথক হলেও তাই হাতিয়ার একই দুই রাজনৈতিক দলের।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty + 14 =