অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত অল্পবয়সি গৃহবধূরাও, পড়ছেন বিপাকে

সম্প্রতি ইংলিশ বাজার অঞ্চলের বাসিন্দা এক ছাত্র অনলাইন গেমের মাধ্যমে একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে। দফায় দফায় টাকা চাওয়া হয় সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রের থেকে। ওই ছাত্রের বাবা একজন ব্যবসায়ী। চক্রের হাতে টাকা দিতে ওই বাবার আলমারি থেকে দেড় লক্ষ টাকা চুরি করতে বাধ্য হয় ওই ছাত্র।

 

মালদহ: গৃহবধূদের একাকীত্বে কাটে দিনের অনেকটা সময়। সেই সময়ে অনলাইন গেমের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ছেন তাঁরা৷ ছাত্রছাত্রী, কিশোর কিশোরিদের পাশাপাশি বর্তমানে গৃহবধূদের অনলাইন গেমের প্রতি আকর্ষণ এখন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে৷ বলছে সমীক্ষা। এই সমস্ত অনলাইন গেমের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের রমরমা বাড়ছে প্রতিদিন। সেই অসাধু ব্যবসায়ীদের শিকার হচ্ছেন গৃহবধূরাও। গেমের মাধ্যমে গৃহবধূ, ছাত্রছাত্রী, কিশোর কিশোরিদের ব্যাঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। লজ্জায় কিংবা ভয়ে পুলিশের কাছে এই বিষয়ে জানাতেও পারছেন না তাঁদের অনেকেই।

সম্প্রতি ইংলিশ বাজার অঞ্চলের বাসিন্দা এক ছাত্র অনলাইন গেমের মাধ্যমে একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে। দফায় দফায় টাকা চাওয়া হয় সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রের থেকে। ওই ছাত্রের বাবা একজন ব্যবসায়ী। চক্রের হাতে টাকা দিতে ওই বাবার আলমারি থেকে দেড় লক্ষ টাকা চুরি করতে বাধ্য হয় ওই ছাত্র। এরপর ওই ব্যবসায়ী থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্তে নেমে এলাকার তিন কিশোরকে আটক করে। এরপর পুলিশের সামনে একাধিক তথ্য উঠে আসে। তারা জানতে পারে, এলাকার ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি একাধিক গৃহবধূরাও ওই অনলাইন গেমে আসক্ত হয়েছেন।

ইংলিশবাজার থানার এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ওই অনলাইন গেমে খেলার পাশাপাশি এক বা একাধিক ব্যক্তি অনলাইন চ্যাট করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে একে অপরকে চেনে না। ফলে দেশের এক প্রান্তের ব্যক্তির সঙ্গে অপর প্রান্তের অচেনা ব্যক্তির কথোপকথনে কোনও বাঁধা নেই। যার ফলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ওই অফিসার জানিয়েছেন, দ্রুত ইংলিশবাজার ও তার পাশাপাশি অঞ্চলে এই অসাধু ব্যবসা বন্ধ করাই এখন একমাত্র লক্ষ্য তাঁদের৷

এ ব্যাপারে মনোবিদ নিবেদিতা গোস্বামী জানিয়েছেন, লকডাউনে সকলে গৃহবন্দি। গৃহবধূদের বেশিরভাগ সময় সংসার সামলাতেই চলে যায়, ফলে তাঁরা নিজেদের জন্যে এতটুকু সময় বের করতে পারেন না। করোনা পরিস্থিতির জেরে পার্লার, শপিং মল কিংবা বাইরে বেরনো কার্যত বন্ধ৷  আবার স্কুল কলেজ ইত্যাদি বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীরাও দিনরাত বাড়িতেই বসে থাকছে। ফলে এই সমস্ত কারণেই কিছুটা সময় কাটানোর জন্য তাঁরা প্রত্যেকে মোবাইলে অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন৷

পাশাপাশি নিবেদিতা গোস্বামী এও বলেছেন, করোনার জেরে সকলের ভবিষ্যতই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, ফলে কেউ বর্তমানে অন্যের উদ্বেগ নিয়ে চিন্তিত নয়। তাই আরও বেশি করে স্মার্ট ফোনই মানুষের একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠছে। তবে তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব নয়। এর উপায় হিসাবে তিনি বলেছেন, পরিবারে একে অপরকে আরও বেশি করে সময় দিতে হবে, পরিবারের ছোট সদস্যদের ওপর নজর বাড়াতে হবে। ছোটদের মধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই, তার কারণ অনুধাবন করাটা জরুরি। কীভাবে তাকে সেই সমস্যা থেকে বের করে আনা যায় তা ভাবতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =