বাড়িতে 4G টাওয়ার বসিয়ে আয় করতে চান? ফাঁদে পা দেওয়ার আগে সাবধান

মহিলাদের দিয়ে ফোন করিয়ে বলা হচ্ছে ১৫ লক্ষ টাকার চুক্তির কথা। সঙ্গে করোনা স্পেশাল সুবিধায় পরিবারের একজনের মিলবে চাকরি। মাসিক ভাড়াও পাওয়া যাবে, বিনিময়ে বাড়িতে ফোর-জি টাওয়ার বসাতে হবে। কিছুদিন আগেই মোবাইল টাওয়ার বসানোর কথা বলে প্রতারণার শিকার হচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ, এবার ফোর-জি  টাওয়ার সেখানে নতুন 'আপডেট' সাইবার প্রতারকদের।

 

বর্ধমান: মিষ্টিভাষি, নরম সুরেলা কণ্ঠের অধিকারি একজন মহিলা যদি আপনাকে ফোন করেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় মুখের ওপর ফোনটা কেটে দিতে পারবেন না! তার ওপর যদি সেখানে থাকে লোভনীয় অফার, সেখানে তো ফোন রেখে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আর ঠিক এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাইবার প্রতারকেরা। মহিলাদের দিয়ে ফোন করিয়ে বলা হচ্ছে ১৫ লক্ষ টাকার চুক্তির কথা। সঙ্গে করোনা স্পেশাল সুবিধায় পরিবারের একজনের মিলবে চাকরি। মাসিক ভাড়াও পাওয়া যাবে, বিনিময়ে বাড়িতে ফোর-জি টাওয়ার বসাতে হবে। কিছুদিন আগেই মোবাইল টাওয়ার বসানোর কথা বলে প্রতারণার শিকার হচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ, এবার ফোর-জি  টাওয়ার সেখানে নতুন 'আপডেট' সাইবার প্রতারকদের।

পুলিশ তরফে জানানো হয়েছে, মূলত জামতাড়ার গ্যাং এই ধরনের অপরাধের পিছনে জড়িত থাকত। কিন্তু ফোর-জি চক্রের অপরাধীরা কলকাতা কিংবা তার আশপাশের অঞ্চলেই আছে। পুলিশ এর কারণ হিসাবে বলছেন, যে মহিলারা ফোন করছেন তাঁরা সুস্পষ্ট বাংলায় কথা বলছেন। তাঁরা একটি মোবাইল টাওয়ার সংস্থার নাম করেই কথা বলছেন। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ফোন করার পর ওই মহিলারা বলছেন, করোনার জন্য সারা দেশে এখন অনলাইনে কাজ চলছে। তবে যেদিন যেদিন লকডাউন থাকছে সেদিন অফিস ছুটি থাকছে। রাজ্যজুড়ে ফোর-জি টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। টাওয়ারের জন্য ছাদে ১০০ বর্গফুটের জায়গা থাকলেই চলবে। কোম্পানির সঙ্গে বাড়ির মালিকের ১৫ বছরের চুক্তির কথা বলা হচ্ছে। চুক্তির ১৫ লক্ষ টাকার পাশাপাশি মাসিক ১০ হাজার ৮০০ টাকা দেওয়া হবে মালিককে। পরিবারের একজনকে টাওয়ার গার্ডের চাকরিও প্রদান করবে কোম্পানি। পিএফ ও ইএসআই কেটে মাসিক ৯ হাজার ২০০ টাকা বেতন পাবেন সেই কর্মী। ফলে দেখাই যাচ্ছে লোভনীয় অফার। আর এই ফাঁদে পরেই সর্বস্ব হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

কীভাবে করা হচ্ছে প্রতারণা? প্রথমে হোয়াটস অ্যাপে জমির দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বরের সঙ্গে জমির মালিকের সমস্ত কাগজপত্র পাঠাতে বলা হচ্ছে। কোম্পানি তরফে স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই জমি দেখে নেবে কোম্পানি এমনটাই জানাচ্ছে ফোনে মহিলারা। চুক্তির ১৫ লক্ষের মধ্যে প্রথম দফায় পাওয়া যাবে ৫ লক্ষ টাকা। এরপরেই প্রতারণার আসল কোপ মারছে অপরাধীরা। তারা এরপর বলছে,  টাওয়ার বসানোর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’, টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা 'ট্রাই', এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই চার জায়গা থেকে অনুমতি নিতে হবে। দূষণের অনুমতির জন্য ২০ হাজার টাকা চাইছে সংস্থা। টাওয়ার বসানোর পর ১৮ শতাংশ জিএসটি কেটে ওই টাকাও ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে প্রতারকেরা। আর সেই টাকা পাঠানোর পর প্রতারিত হচ্ছেন বাড়ির মালিক। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় একাধিক মামলা জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। পুলিশ গেফতারও করেছেন কয়েকজনকে। এমনকি ২০ হাজারের বদলে দুদিনে আবেদন করলে ডিসকাউন্ট হিসাবে ৯৯৯৯ টাকা দিতে হবে মাত্র এও বলছে প্রতারকেরা। সেই টাকাও খোয়া যাচ্ছে জমি মালিকদের। ফলে এই ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি সতর্ক হতে বলছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *