অবশেষে মুক্তি, কিন্তু জীবন থেকে হারিয়ে গেল ১৫টা বছর!

সিনেমা যে বাস্তব হতে পারে তা আরও একবার প্রমাণিত হল। ছবি বিশ্বাসের 'সবার উপরে' ছবির কথা মনে আছে? যেখানে ছবি বিশ্বাস আদালতে বিচারকের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছেন, “আমি খালাস চাইনে, ফিরিয়ে দাও সেই ১২টা বছর, ফিরিয়ে দাও!” তফাৎ কেবল দুই জায়গায়, প্রথমটি হল ছবিতে ১২ বছর আর বাস্তবে ১৫ বছর। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ছবির শেষে ছবি বিশ্বাস বলেছিলেন, “আমি আইন-আদালত-ধর্ম-ভগবানে বিশ্বাস করিনা।” আর বাস্তবের ইন্দ্রজিৎ সরকার বলছেন, “সত্যমেব জয়তে”।

কলকাতা: সিনেমা যে বাস্তব হতে পারে তা আরও একবার প্রমাণিত হল। ছবি বিশ্বাসের 'সবার উপরে' ছবির কথা মনে আছে? যেখানে ছবি বিশ্বাস আদালতে বিচারকের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছেন, “আমি খালাস চাইনে, ফিরিয়ে দাও সেই ১২টা বছর, ফিরিয়ে দাও!” তফাৎ কেবল দুই জায়গায়, প্রথমটি হল ছবিতে ১২ বছর আর বাস্তবে ১৫ বছর। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ছবির শেষে ছবি বিশ্বাস বলেছিলেন, “আমি আইন-আদালত-ধর্ম-ভগবানে বিশ্বাস করিনা।” আর বাস্তবের ইন্দ্রজিৎ সরকার বলছেন, “সত্যমেব জয়তে”।

সল্টলেকের বিধান আবাসনের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ সরকার রাজ্য অর্থ দফতরের আধিকারিক। বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। বর্তমানে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে কর্মরত। জীবনের ১৫টা বছর আদালত-জেল করেই কেটে গিয়েছে। ২০০৫ সালে বধূ নির্যাতন মামলায় অভিযুক্ত হন ইন্দ্রজিৎ বাবু ও তাঁর বাবা-মা। জেল খেটেছেন, চাকরির সাসপেনশনও হয়েছিল তাঁর, তবু লড়াই ছাড়েননি। সম্প্রতি বিধাননগর মহকুমা আদালতের বিচারক আরফা ইয়াসমিন ইন্দ্রজিৎ বাবু ও তাঁর মা-বাবাকে বেকসুর খালাস করেছেন। কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ১৫টা বছর। ইন্দ্রজিৎ বাবুর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, এও এক এনকাউন্টার, ১৫ বছর ধরে ইন্দ্রজিৎ বাবু রোজ একটু একটু করে মারা গিয়েছেন।

২০০৫ সালে নিউ পার্ক গড়িয়া স্টেশন রোডের বাসিন্দা দীপ্তি ধরের সঙ্গে বিয়ে হয় ইন্দ্রজিৎ বাবুর। এরপর থেকেই শ্বশুর বাড়িতে বিভিন্ন বিষয়ে অশান্তি শুরু করেন দীপ্তি। একদিন দীপ্তি তাঁর মাকে খবর দিয়ে পুলিশ ডেকে আনেন বাড়িতে। দু'দিন পর শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান দীপ্তি। এরপর দক্ষিণ বিধাননগর থানায় ইন্দ্রজিৎ বাবু ও তাঁর মা-বাবার বিরুদ্ধে জোর করে টাকা আদায় এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। ৪৯৮ ধারায় মামলা শুরু হয়। গ্রেফতার হন ইন্দ্রজিৎ ও তাঁর মা-বাবা। চাকরি নিয়ে টানাটানিও পড়ে যায়। পাশাপাশি মানসিক অবসাদের শিকার হন ইন্দ্রজিৎ বাবু।

ইন্দ্রজিৎ বাবুর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ বাবু জানিয়েছেন, আদালতে দীপ্তি ধরের সততা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সরকারি আইনজীবীদের তরফে ঘটনার বিকৃতি ঘটানোর প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। আদালতে পেশ করা মিথ্যা নথি থেকে আসল সত্যি উদঘাটনের কাজ সহজ ছিল না বলেই অভিমত দেন জয়ন্ত বাবু। তাঁর কথায়, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অভিযোগকারী দীপ্তি ধর দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারাকে অপব্যবহার করে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করার চেষ্টা করেছেন। আদালত এই অপরাধকে মেনে না অভিযুক্ত ইন্দ্রজিৎ সরকার ও তাঁর বাবা-মাকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছরে জীবনের আশা-আকাঙ্খা, স্বপ্ন, যৌবন, প্রত্যাশা সমস্ত কিছুই হারিয়েছেন ইন্দ্রজিৎ বাবু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 5 =