বেলাগাম আলু, ‘নিখোঁজ’ মুখ্যমন্ত্রীর টাস্কফোর্স! বাজারে-বাজারে গণস্বাক্ষর

বেলাগাম আলু, ‘নিখোঁজ’ মুখ্যমন্ত্রীর টাস্কফোর্স! বাজারে-বাজারে গণস্বাক্ষর

কলকাতা: অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে আগেই বাদ পেড়েছে আলু-পেঁয়াজ থেকে শুরু করে তৈলবীজের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য৷ তার উপর করোনা মহামারী৷ সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমফানের তাণ্ডব৷ ত্রিমুখে চাপে নাজেহার জনতা৷ সুযোগ বুঝে ২০-২৫টাকা আলু এখন হাফ সেঞ্চুরি দোরগোড়ায়৷ শহর কলকাতা হোক, মফস্বলের হাট-বাজার৷ মহার্ঘ আলু ৩৮ পেরিয়ে রেকর্ড গড়েছে৷ আগুন সব্জির বাজারে৷ আলু থেকে সব্জি, দাম মধ্যবিত্তের নাগালে আনতে পুরোপুরি ব্যর্থ রাজ্য সরকার৷ কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বাজার দর? করোনা-কালে কেন বাড়তি টাকা দিয়ে আলু কিনতে হবে জনতাকে? প্রশাসনের কানে খবর পৌঁছতে দিতে বাজারে বাজারে গণস্বাক্ষর সংগ্রহে নামল মধ্যমগ্রামের এক স্বেচ্ছা সেবী সংস্থা৷

চাল-ডালের দাম আগেই বেড়েছে৷ মাছ-ডিমের দামও চড়া৷ সব্জির দামেও আগুন৷ করোনা-কালে সামান্য আলু-সেদ্ধ ভাত জোগাতে হিমশিম অবস্থা সাধারণ জনতার৷ পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে, তা বেমালুম টের পাচ্ছে আম জনতা৷ জনতার ক্ষোভের আঁচ পেয়ে সরকার আলুর দাম বেঁধে দিলেও সুদিন দেখেন বাজার৷ ব্যথিক্রম নয় মধ্যমগ্রাম৷ মধ্যমগ্রাম বাজারে জ্যোতি আলু ৩২ থেকে ৩৫ টাকা৷ চন্দ্রমুখী আলু ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে৷ প্রশাসনের নজরদারির ফাঁক গলে বেলাগম আলু৷ গৃহস্থের হেঁসেলেও পড়েছে প্রভাব৷ মহার্ঘ আলু কিনতে এসে সরাসরি সরকারের ব্যর্থতার দিকেই আঙুল তুলছেন ক্রেতাদের একাংশ৷ কেউ বলছেন, ২০ টাকার আলু কেন ৩৫ টাকা? সরকারের নিয়ন্ত্রণ কেন নেই? কেউ আবার পকেট বুঝে ২৫০-র বদলে আলু নিচ্ছে মাত্র ১০০ গ্রাম৷

মহার্ঘ আলু নিয়ে জনতার অসন্তোষ থাকলেও ক কালোবাজারি মানতে নারাজ বিক্রেতারা৷ সরকার কিংবা বাজার কর্তৃপক্ষ কেন লিখিত নির্দেশ দিচ্ছে না? পাল্টা প্রশ্ন বিক্রেতাদের৷ তবে, তাঁদের রয়েছে বেশকিছু যুক্তি৷ খুচরো বিক্রেতাদের দাবি, তারা ১৪২০ টাকা দরে পাইকারের কাছ থেকে আলু কিনছেন৷ বেশি দামে আলু কেনা হচ্ছে বলে দামও বেশি বলেও মত বিক্রেতাদের৷ কেন সরকার কিংবা বাজার কমিটি, আলুর দাম নিয়ে কেন লিখিত বয়ান দিচ্ছে না? প্রশ্ন সাধারণ বিক্রেতাদের৷

বেলাগাম আলুন দাম নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়ে সাধারণ জনতার পাশে দাঁড়িয়েছে মধ্যমগ্রামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা৷ আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়ে বাজারে বাজারে প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা৷ সঙ্গে চলছে গণসাক্ষর সংগ্রহের কাজ৷ টাস্কফোর্স নিখোঁজ বলেও তোলা হয়েছে অভিযোগ৷ এই মর্মে অভিযোগ করা হবে বলেও দাবি সংগঠনের৷

তাদের দাবি, কালোবাজারি আটকাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন৷ সাধারণ ক্রেতাদের গণস্বাক্ষর-সহ দাবিপত্র তারা জেলা শাষকের কাছে জমা দেবেন৷ প্রশাসন পাইকারি বাজারে নজরদারি বাড়াক, দাবি সংস্থার৷ তাদের আক্ষেপ, মুখ্যমন্ত্রীর হাতে রয়েছে রাজ্যে একটি টাস্ক ফোর্স৷ যারা বাজারে বাজারে দাম ঠিক আছে কি না দেখেন৷ সেই টাস্কফোর্সকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংস্থার অভিযোগ৷ টাস্কফোর্স নিখোঁজ ডাইরি করা হবে বলেও জানানো হয়েছে সংস্থার তরফে৷

করোনা-কালে মানুষের রোজগার কমলেও বেড়েছে পেট্রোল ডিজেল, খাদ্যসামগ্রী সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম৷ রাজ্যে বেলাগাম মুল্যবৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য সরকারকে ইতিমধ্যেই দুষেছে বাম-কংগ্রেস৷ মুখ্যমন্ত্রীর টাস্ক ফোর্স কোথায়?  প্রশ্ন তুললেন বামফ্রন্ট পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী ও বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান৷ গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ২০১১ সালের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মুল্যবৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়ে বলেও অভিযোগ তোলা হয়৷ ফড়েদের দাপট চলছে বলেও তোলা হয় অভিযোগ৷

জনতার ক্ষোভ, বিক্রেতাদের পাল্টা যুক্তি, রাজনীতি! মহামারীর সুযোগ নিয়ে আর কত দিন চলবে জনতার পকেট লুট? কোথায় সরকারের কড়া নজরদারি? বাজারের বাজারে নিয়মিত হানা কোথায়? কেন হিমঘরে হানা দিতে পারছে না প্রশাসন? মা-মাটি-মানুষের প্রতিনিধিরা কোথায়? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে৷ দুয়ারে একুশে-নির্বাচন৷ ইভিএমে পড়বে না তো মহার্ঘ আলু-সব্জির প্রভাব? আশঙ্কা কিন্তু অমূলক নয়৷ জনতাও হিসাব রাখে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 4 =