সম্প্রীতির বাংলা! কবরস্থান তৈরির জন্য এক একর জমি দান করলেন হিন্দু ‘কাকাবাবু’

কবরস্থানের জমি পেয়ে খুশি শেখ মইনুদ্দিন, শেখ আলি আরশাদদের বক্তব্য, ‘কাকাবাবু কত বড় উপকার করেছেন, বলে বোঝানো যাবে না। হিন্দু-মুসলিম যে আলাদা নয়, তা ওঁকে দেখে শেখা যায়।’ স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জেম শেখ সরিফউদ্দিন বলেন, ‘সামান্য কিছুটা জায়গা রেজিস্ট্রি হতে বাকি আছে। কালীকৃষ্ণবাবু বারবার তা সারতে বলছেন। ওঁর মতো মানুষ মেলা ভার।’

বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের ১ ব্লকের তালিত গ্রামে হিন্দু-মুসলমানের বাস পাশাপাশি। সেই ছোট্টো বয়স থেকেই গ্রামে কোনো সংখ্যালঘু পাড়ার কেউ মারা গেলে শেষকৃত্য করতে যেতে হয় পাশের গ্রামে। তিনি দেখেছেন গ্রামে কবরস্থান না থাকায় পড়শিদের আক্ষেপ করতে। তাই নিজের পারিবারিক জমি কবরস্থানের জন্য দান করলেন ৮৮ বছরের বৃদ্ধ কালীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। তাঁকে গ্রামের মানুষ চেনেন ‘কাকাবাবু’ নামে। মেরুকরণের রাজনীতির মাঝে এই ঘটনা যেন ছোট্ট এক মরুদ্যান।

ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা কালীকৃষ্ণবাবুদের গ্রামের সাধপুকুরের পাশে বেশ কিছুটা জমি রয়েছে, সেই জমি থেকেই ১ একর ৬ শতক জমি দান করলেন গ্রামে কবরস্থান তৈরির জন্যে। কিছুদিন আগেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে কবরস্থানের জন্য সেই জমি নথিভুক্ত হয়েছে। কবরস্থানে ঢোকার মুখে নমাজ পড়ার জন্য দিন পাঁচেক আগে জায়গা বাঁধানোর কাজও শুরু হয়েছে।

এর আগেও এই স্ত্রী হারা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী গ্রামের মানুষের প্রয়োজনে জমি দান করেছেন। বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামের পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ার মধ্যে যাতায়াতের অসুবিধা থাকায়, দু’টি পুকুরের মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরির জন্য, নিজেদের জমি দিয়ে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন গ্রামে ‘কাকাবাবু’ বলে পরিচিত কালীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়।

কবরস্থানের জমি পেয়ে খুশি শেখ মইনুদ্দিন, শেখ আলি আরশাদদের বক্তব্য, ‘কাকাবাবু কত বড় উপকার করেছেন, বলে বোঝানো যাবে না। হিন্দু-মুসলিম যে আলাদা নয়, তা ওঁকে দেখে শেখা যায়।’ স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জেম শেখ সরিফউদ্দিন বলেন, ‘সামান্য কিছুটা জায়গা রেজিস্ট্রি হতে বাকি আছে। কালীকৃষ্ণবাবু বারবার তা সারতে বলছেন। ওঁর মতো মানুষ মেলা ভার।’ প্রতিবেশী সমীর ভট্টাচার্যের কথায়, ‘ওঁকে নিয়ে আমরা গর্বিত।’ তাঁর নাতি সাহেব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘আমাদের এলাকায় যে ভেদাভেদ নেই, তা দাদুর কাজেই পরিষ্কার।’ 

কালীকৃষ্ণবাবুর কথায়, ‘আমার জায়গায় গ্রামের মানুষের শেষকৃত্য হচ্ছে, ভেবে ভাল লাগছে। জমি দেওয়ার পরে, ওঁরা আমাকে মিষ্টি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলেন। বলেছি, কর্তব্য করেছি মাত্র।’
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − eight =