কলকাতা: সামনেই ২১-এর বিধানসভা নির্বাচন। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে সাইবার জালিয়াতিরা ক্রমশ রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা চলছে৷ ভুয়ো খবরের রমরমা প্রতিদিন বেড়ে উঠছে, যা ভোটের আগে শাসকদলের ভাবমূর্তির পক্ষে সংকেত বয়ে আনছে। আর তা রুখতে মুখ্যমন্ত্রী সেই সমস্ত সাইবার অপরাধীদের শায়েস্তা করার জন্য সাইবার সেলকে আরও কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন৷
সাইবার অপরাধীদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন শাখাকে আরও মজবুত করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেক্ষেত্রে ভুয়ো খবর সংক্রান্ত পোস্টগুলির তদন্ত করে অপরাধীর খোঁজ নিতে বলেছেন তিনি। সেই মতো পশ্চিবঙ্গ সিআইডি তরফে ইতিমধ্যেই একটি সাইবার ফরেনসিক এবং ডিজিটাল প্রমাণ পরীক্ষার ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়েছে বলে খবর৷
সম্প্রতি আসন্ন দুর্গা পুজো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভুয়ো পোস্ট ব্যপক পরিমাণের শেয়ার হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল দুর্গা পুজোর সময় প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত নাইট কার্ফু জারি করবে রাজ্য প্রশাসন। পাশাপাশি সেখানে পুজো নিয়ে একাধিক ভুয়ো সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই এই ধরনের খবর মানুষের চোখে বেশি পড়ে। তাই মানুষ এর ফলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন, পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের পক্ষেও এই ধরনের খবর ছড়ানোয় ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি এই নিয়ে রাজ্য পুলিশের নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এই পোস্ট ভুয়ো বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাধীদের খুঁজে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাইবার সেলকে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ অনুযায়ী এই পোস্টের মূল মাথা ও তার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পুলিশ দিবসের অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সাইবার সেলকে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যে কোনও সাইবার অপরাধকে দ্রুত সমাধান করতে হবে, অপরাধীকে ধরে শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি সাইবার অপরাধে প্রতিটি থানাকে আরও বেশী সচেতন হওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০১৯ এর লোকসভা ও ৪ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময় ১৫৪ টিরও বেশি ভুয়ো খবর ও বিভ্রান্তিমূলক বার্তা প্রকাশ করা হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ১৯ এর লোকসভার আগে একটি সংবাদপত্রের ভুয়ো প্রথম পাতার বড় বড় অক্ষরে শিরোনামে লেখা ছিল ‘৪২টা আসন দিন, হিন্দু কীভাবে কাঁদাতে হয়ে দেখিয়ে দেব: মমতা’৷ যা আদৌ ওই সংবাদপত্র প্রকাশ করেনি। এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তথা রাজ্যবাসীর মধ্যে তুমুল বিভ্রান্তির সূচনা করেছিল।
লকডাউনের মধ্যেই গত ৫ মাসে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগে ২৫০ জনেরও বেশি অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এই সমস্ত সাইবার অপারধের নেপথ্যে বিজেপির আইটি সেলের হাত রয়েছে। পাশাপাশি এ ব্যাপারে তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়েছে, বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে নেমে ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে উভয় জায়গায় লড়াই চালাবে দল। অন্যদিকে দল পাল্টে বিজেপিতে যাওয়া বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেছেন, ‘‘আসলে তৃণমূল সরকার ক্রমশ পায়ের তলার মাটি হারাচ্ছেন, তাই বিজেপির কর্মীদের ভুয়ো মামলায় গ্রেফতার করাচ্ছেন। কিন্তু এসব করে ভোটে কোনও জায়গা দখল করতে পারবে না তৃণমূল।’’